সাঙ্গ হলো ক্রিকেট মেলা
নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা-বহু উচ্চারিত এ কথাটিকে সত্য প্রমাণ করে আইসিসি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলো অস্ট্রেলিয়া। পুরো টুর্নামেন্টে দাপটের সঙ্গে খেলেও ফাইনালে এসে পরাজিত হলো ভারত। ফাইনাল ম্যাচে কোন দল জয়ী হবে, তা ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়ে কিছুটা আঁচ করা গেলেও অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয় ধাঁধায় ফেলেছিল দর্শকদের।
যদিও আগের পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া যে বিপর্যয় সামাল দিতে সিদ্ধহস্ত, তা ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবারও প্রমাণ করল তারা। দারুণ উপভোগ্য এ টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া দলের প্রতি রইল আমাদের অভিনন্দন।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স দেশের ক্রিকেটভক্তদের আশাহত করেছে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের সুবাদে ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার পথ তৈরি হয় বাংলাদেশের। দিনে দিনে বাংলাদেশ দল আরও অভিজ্ঞ ও পরিপক্ব হয়েছে। তবে এবার দল গঠনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কিছু সিদ্ধান্ত ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। বিশেষ করে তামিম ইকবালকে দলে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত যে সঠিক হয়নি, তা ক্রিকেটবোদ্ধারা শুরু থেকেই বলে আসছিলেন। বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরে অভিজ্ঞদের জায়গা না দিয়ে অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের খেলানোর সমালোচনাও কম হয়নি।
কারও কারও মতে, এবার সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ কাটিয়ে দেশে ফিরেছে টাইগাররা। ওপেনার হিসাবে এখনো তামিম ইকবালের যে বিকল্প নেই, তা স্পষ্ট হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই, যদিও সেই ম্যাচে জয়লাভ করে বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলংকা ছাড়া আর কোনো দলের বিপক্ষেই ভালো ফলাফল করতে পারেনি টাইগাররা। প্রায় প্রতিটি ম্যাচের ওপেনিংয়েই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তারা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারকে লাইনআপে শেষের দিকে রাখাও যে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, তা তিনি নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছেন। আর এসব নিয়ে দর্শকদের অসন্তুষ্টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পষ্টই পরিলক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদিও এবারের বিশ্বকাপকে গুরুত্বের সঙ্গে না দেখে পরবর্তী আসরে ভালো ফলাফলের জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিল, যা কর্মকর্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে; তবে ভেবে দেখা উচিত ছিল, এবারের আসরে আরও ব্যর্থতার পরিচয় দিলে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ নাও মিলতে পারত। এ আশঙ্কা প্রথম রাউন্ডে দেখাও দিয়েছিল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে দেশে তাই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
টাইগাররা আফগানিস্তান ও শ্রীলংকার বিপক্ষে জয় পেলেও অন্য দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি। ভবিষ্যতে সাফল্য অর্জনের জন্য তাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে। দৃষ্টি দিতে হবে অধিনায়কত্ব ও কোচিংয়ের ওপরও। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সুসম্পর্কের বিষয়টি। কোচ হিসাবে যিনি দলের দায়িত্ব নিয়েছেন, তারও উচিত সবাইকে এক দৃষ্টিতে দেখা। অভিজ্ঞ ও ফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের আরও শানিত করা আর অপেক্ষাকৃত দুর্বল খেলোয়াড়দের দক্ষ করে গড়ে তোলা। এবারের বিশ্বকাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড, খেলোয়াড়সহ সংশ্লিষ্টরা পরবর্তী আসরে ভালো ফলের লক্ষ্যসহ প্রস্তুতি নেবেন, এটাই প্রত্যাশা।