সংকটের শিকার শিক্ষাব্যবস্থা
রাজনীতি হোক জনকল্যাণমুখী
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তত সংকটময় হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী সব রাজনৈতিক দল কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এরই মধ্যে বিরোধীদলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধের কারণে নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। যদিও স্বাভাবিক নিয়মে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, কোথাও আবার শেষ সময়ের ক্লাস চলছে। কারণ বছরের শেষদিকে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ উচ্চস্তরে বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা শিক্ষা কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা রোববার ও সোমবারের হরতালকে কেন্দ্র করে সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে, তবে এর পেছনে যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাই লক্ষ্য হিসাবে কাজ করেছে, তা বলাই বাহুল্য। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষকেই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকও রয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস চলতে আমরা দেখছি, তা অবশ্যই উদ্বেগজনক। ক্ষমতাসীন দলের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধীদলগুলোর লাগাতার হরতাল-অবরোধ দেশের চলমান অগ্রযাত্রাকে যেমন ব্যাহত করছে, তেমনই শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যানবাহনে আগুন দেওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অবরোধের কারণে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন। যাওয়া-আসার পথে শিক্ষার্থীরাও থাকে উদ্বিগ্ন। হরতাল-অবরোধের কারণে ক্লাস পরীক্ষা বিঘ্ন হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে পড়াশোনায় অনীহাও চলে এসেছে।
মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা দখল নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর অগ্রাধিকারে থাকতে হবে জনকল্যাণ। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া উচিত নয়, যা জানমালের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সেটা হলে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর, সর্বোপরি রাজনীতির ওপর থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে; যা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও অগ্রযাত্রার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে যেন সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদায় অন্তরায় সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সব দল দৃষ্টি দেবে-এটাই প্রত্যাশা।