Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

মানবাধিকার পরিস্থিতি

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানবাধিকার পরিস্থিতি

জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের (ইউপিআর) নিয়মিত পর্যালোচনায় বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছে। জানা যায়, এ সময় বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। দেশের আসন্ন নির্বাচন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনের শাসন ইত্যাদি বিষয়ও আলোচনায় আসে। ইউপিআরে পর্যালোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা এবং আইনের শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দেশ মৃত্যুদণ্ড বিলোপের সুপারিশ করে। একইসঙ্গে গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর এবং গুমের অভিযোগগুলোর স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানায়। নির্যাতনবিরোধী সনদ কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চারের (সিএটি) অতিরিক্ত প্রটোকল স্বাক্ষরের সুপারিশও করে অনেক দেশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে আনা সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিষয়েও আলোচনা হয়। অবশ্য সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনার পাশাপাশি অনেকে প্রশংসাও করেছেন।

এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মানবাধিকার ও আইন বিশেষজ্ঞরা তাদের অভিমত তুলে ধরে বলেছেন, এদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনামূলক মূল্যায়ন অতীতেও হয়েছে; কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে সরকারের পদক্ষেপে আগেও ঘাটতি ছিল, এখনো রয়েছে। তবে দেখার বিষয়, উত্থাপিত অভিযোগগুলো কতটুকু সঠিক ও বাস্তবসম্মত। আমরা দেখছি, র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আর ঘটেনি বললেই চলে। তার মানে, সরকার এ ধরনের ঘটনা রোধে আন্তরিক এবং কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আরও একটি বিষয় হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি আইন। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে এর অপব্যবহারও বিশ্বব্যাপী আমরা দেখতে পাই। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য পরিপন্থী নানা কার্যকলাপ, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো ঘটনা রোধে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের দেশে সাইবার অপরাধ যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ ধরনের আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এ আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে বিচার না করে সামগ্রিকভাবে এ আইন দ্বারা সবাই উপকৃত হচ্ছে কিনা, সেটাই বিবেচ্য।

এছাড়া বিরোধী মত দমনে আইনের অপপ্রয়োগের যে অভিযোগটি সামনে এসেছে, তা নিয়েও সব দেশেই মিশ্র মত দেখা যায়। মনে রাখা দরকার, অপশক্তিকে দমন করতে গিয়ে আইনের প্রয়োগ ঘটালে তা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতি নয়, বরং সুফলই বয়ে আনে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশেই ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন সংগ্রামের প্রথা চালু রয়েছে। তবে অবশ্যই তা হতে হয় জনগণের স্বার্থে, জানমালের ক্ষতি না করে। যদি সরকার ও জনগণের সম্পদের ক্ষতিসাধন করা হয়, তাহলে আইনের প্রয়োগ হবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার সরকারকেও এটা বিবেচনায় রাখতে হবে যে, অপশক্তিকে দমনের নামে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেফতার কিংবা হয়রানি করা হচ্ছে কিনা। যদি প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় না এনে নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হয়, তাহলে তা অবশ্যই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আমরা আশা করব, মানবাধিকার বিষয়ে উত্থাপিত বিষয়গুলো সরকার যথাযথ যুক্তি ও তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে পরিষ্কার করবে। পাশাপাশি সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো তাদের কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম