অর্থমন্ত্রীর সময়োচিত উপলব্ধি
তার কথার বাস্তবায়ন দেখতে চাই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যুগান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তিনি বা তার গ্রুপভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পাবে না। পাশাপাশি জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া কোনো ঋণ পুনঃতফশিলীকরণ হবে না। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে তা আট শতাংশের নিচে নেমে আসবে। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশে এর প্রভাব, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক উল্লম্ফনসহ তিনি অর্থনীতির নানা বিষয় এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং তার দেওয়া নীতির ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেই সরকার করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কাজ করছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য, সারসহ অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেলে এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়ে। তবে দেশের সাধারণ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সহজাত সক্ষমতা এবং তাদের সহনশীলতা অর্থনীতির মূল শক্তি হিসাবে যেভাবে কাজ করছে, তাতে মূল্যস্ফীতি দ্রুতই সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন।
এটা সত্যি, একদিকে বিশ্ববাজারে ডলারের দাম বেড়েছে, তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় গ্রাহকরা এখন ব্যাংক থেকে সঞ্চয়ের টাকা তুলে দৈনন্দিন খরচ মেটাচ্ছেন। এছাড়া নানা অনিশ্চয়তায় অনেকে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিজের কাছে রাখছেন। এর পাশাপাশি রয়েছে খেলাপি ঋণ। প্রভাবশালী চক্র যেভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুমকিতে ফেলছে, এ ব্যাপারেও আইন সংশোধনসহ নানা ধরনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিতকরণ কার্যক্রম আরও সুচারুরূপে সম্পাদন করতে এবং তাদের বিষয়ে অধিকতর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দরকার হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও নির্দেশনা জারি করবে। এখন ব্যাংকগুলোর আয়, প্রভিশন সংরক্ষণ, মূলধন সংরক্ষণ অবস্থার উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি ব্যাংককে শ্রেণিকৃত ঋণ আরও কমিয়ে আনার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যেসব ঋণ শ্রেণিকৃত হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতফশিল করা যাবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে হাইকোর্ট বিভাগে ৮টি পৃথক বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে বর্তমান আইনানুযায়ী অর্থ আদায়ের বিকল্প নেই। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফশিলীকরণের পথ বন্ধের যে উদ্যোগ অর্থমন্ত্রী নিয়েছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমানো এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের যে সদিচ্ছা রয়েছে, তাও অর্থমন্ত্রীর কথায় উঠে এসেছে। তবে এর পাশাপাশি বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা গেলে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কার্যকর উদ্যোগ ও সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি তার শক্ত অবস্থান বজায় রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।