Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ, হামলা ও ভাঙচুর সমাধান নয়

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ, হামলা ও ভাঙচুর সমাধান নয়

ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির দাবিকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের গার্মেন্ট কারখানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত।

গত কয়েকদিনে ঢাকা, গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে আড়াইশ পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় অন্তত ৬৫০ কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর-এ তিন মাস বিদেশি ক্রেতারা সাধারণত নতুন কার্যাদেশ দেন। এখন শ্রমিক আন্দোলনের নামে যেভাবে কারখানা ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করা হচ্ছে, তাতে হুমকির মুখে পড়বে এ খাত। এমনিতেই বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রমিকদের আন্দোলন। পাশাপাশি চলছে রাজনৈতিক কর্মসূচি-অবরোধ। এতে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এ শিল্পে। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, শ্রমিক আন্দোলনের নামে কোনো গোষ্ঠী এ খাতকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এমনিতেই রাজনীতির মাঠ গরম। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার আগে শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে কোনো পক্ষের হাত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে কোনো পক্ষ যেন নিরীহ শ্রমিকদের ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যদিকে, শ্রমিকপক্ষের দাবি-মূল্যস্ফীতির কারণে বর্তমান মজুরি দিয়ে জীবনধারণ সম্ভব নয়, তাই বেতন বাড়াতে হবে।

শ্রমিকদের বুঝতে হবে, শ্রমিক সংগঠনগুলোর কারণে কর্মীরা যেভাবে নিজেদের পোশাক কারখানায় নিজেরাই অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালান, তা এক কথায় হঠকারিতা। কারণ কারখানা চালু এবং নিয়মিত কাজ থাকলে তা শ্রমিকদের জন্যই মঙ্গলজনক। উপার্জনের স্থানকে হুমকির মুখে ফেললে এর জের শ্রমিকদেরই টানতে হয়। আবার পোশাকশিল্পের কর্ণধারদেরও মনে রাখা প্রয়োজন, শ্রমিকরাই তাদের আয়ের মাধ্যম। একজন শ্রমিক যে উপার্জন করেন, বর্তমান বাজারে তা জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট কিনা, অভিভাবক হিসাবে মালিকদেরও সেদিকে নজর রাখা উচিত।

এটাও সত্য, করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব তৈরি পোশাক খাতেও পড়েছে। বিশ্বের যে দেশগুলো নিয়মিত কার্যাদেশ দিয়ে থাকে, তারা আগের মতো তা দিচ্ছে না। ফলে ত্রিমুখী চাপের মুখে পড়েছে খাতটি। প্রথমত, রাজনৈতিক আন্দোলন-অবরোধ, দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের আন্দোলন এবং তৃতীয়ত, বৈশ্বিক সংকট। এ অবস্থায় করোনার সময় সরকার তৈরি পোশাক খাতকে বাঁচাতে যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল, এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, তা ভেবে দেখা যেতে পারে। সর্বোপরি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎসে কোনো কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক, তা কাঙ্ক্ষিত নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এমনিতেই ডলারের সংকট চলছে। আর দেশে ডলার আয়ের প্রধান দুটি খাতের অন্যতম রপ্তানি, যার বড় অংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুদিন ধরে নিম্নগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতও নানা কারণে ভালো নেই। এমন অবস্থায় রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের গতি স্বাভাবিক রাখতে রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক খাতের চলমান সংকট নিরসনে মালিকপক্ষ, শ্রমিক সংগঠনগুলো ও সরকার ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম