ট্রেন দুর্ঘটনা
রেলযাত্রা নিরাপদ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি যাত্রীবাহীকে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ২০ জন নিহত এবং শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, মালবাহী ট্রেনের চালকের ভুলে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। যাত্রীবাহী ট্রেনটিকে প্ল্যাটফরম থেকে ডাউন লাইনে ঢাকা যাওয়ার গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। সিগন্যাল দেখে চালক ট্রেনটির যাত্রা শুরু করেন। এ সময় আপলাইনে আসা মালবাহী ট্রেনটির ভৈরব স্টেশনে প্রবেশের সিগন্যাল না থাকা সত্ত্বেও চালক স্টেশনে প্রবেশের সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের পেছনের কয়েকটি বগিতে ধাক্কা দেন। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দায়ী প্রমাণিত হওয়ায় মালবাহী ট্রেনের চালক ও গার্ডকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর দুটি ট্রেনের চালক, স্টেশন মাস্টার, কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেন উধাও হয়ে গেলেন, এর তদন্ত হওয়া দরকার। দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এবং ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও নোয়াখালীর ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে এ রুটে আংশিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
দুর্ঘটনার পর আহত ও আতঙ্কিত যাত্রীদের আর্তনাদে চারপাশে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন। পরে একে একে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবির সদস্যরা এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। ঘটনাস্থলে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সন্ধ্যার পর উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয়েছে। মালবাহী ট্রেনের চালক সংকেত অমান্য করার পরও বিকালে স্পষ্ট আলোতে সবকিছু দূর থেকেই পরিষ্কার দেখার কথা। অর্থাৎ একই লাইনে অন্য একটি ট্রেন আছে দেখে গতি কমিয়ে থামানো যেত। সেটা কেন করা হয়নি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
দেশে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি উদ্বেগজনক। ২০১৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দভাগ রেলস্টেশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ জন প্রাণ হারান, আহত হন শতাধিক মানুষ। এরপরও কয়েকটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক বছরে দেশে রেল দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা গেছেন; আহত হয়েছেন অনেকে। এত প্রাণহানির পরও কেন কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি, সেটাই প্রশ্ন। দুঃখজনক হলো, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক উৎসাহ থাকলেও বিদ্যমান রেলের সংস্কারে মনোযোগ কম। এ খাতে জনবল সংকটের বিষয়টিও বহুল আলোচিত।
ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে ট্রেন ভ্রমণে মানুষের আগ্রহ কমতে পারে। কাজেই দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না; রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও এর সুপারিশগুলো কমই আমলে নেওয়া হয়। রেলযাত্রাকে নিরাপদ করতে হবে। দেশে অধিকাংশ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। রেলযাত্রাকে নিরাপদ করতে হলে এ খাতের আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে, বাড়াতে হবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।