ইসির বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার রক্ষা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রকাশ পাচ্ছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের আক্রমণাত্মক রূপ, যা স্বভাবতই জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিচ্ছে।
আগামী নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, এ প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি। তবে এ নির্বাচন আয়োজনে যে প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকবে, তাদের পক্ষ থেকে আসা বিভিন্ন বক্তব্যের অসামঞ্জস্যতা নানা সংশয়ের জন্ম দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নির্বাচন কমিশনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্যে সংশয় প্রকাশ করেছেন। আমরাও দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ইসি কখনো বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে এলো, না এলো তা বড় বিষয় নয়, ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে আসেন এবং নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তাহলেই নির্বাচনে একটি বড় সফলতা অর্জিত হবে। আবার তফশিল ঘোষণার কয়েকদিন বাকি থাকতে এখন বলছে-অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটি এখনো হয়ে ওঠেনি। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংকটের নিরসন হচ্ছে না জানিয়ে ইসি বলেছে, এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কিছু নেই। সব মিলে ইসির বক্তব্যে যে অসামঞ্জস্যতা, তা বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন, তা তৈরির সক্ষমতা এ কমিশনের রয়েছে কিনা।
বস্তুত, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইসির ভূমিকা কী হবে তা স্পষ্ট নয়, যা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি যদি ইসির নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে সেটা তাকে আগেই বিবেচনায় নিতে হবে। সরকারকে তাদের বলতে হবে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে তফশিল ঘোষণা করা যাচ্ছে না। কারণ ইসিকে সহায়তা করাও সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এদিকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের বিষয়ে অনড় ক্ষমতাসীন দল। আর মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে তারা চূড়ান্ত আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব দেখে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ও সংস্থা যেসব মতামত প্রকাশ করছে, তাতে স্পষ্ট যে, আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। যদি আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যেসব সম্পর্ক সেসব দেশের সঙ্গে আমাদের রয়েছে, তাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
আমরা মনে করি, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে মতপার্থক্য রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসেই তার মীমাংসা করতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে হবে। অন্যদিকে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে সব সংশয় ঝেড়ে ফেলে নির্বাচন কমিশনকে পালন করতে হবে কার্যকর ও দৃঢ় ভূমিকা ।