Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

গাজায় ইসরাইলের পাশবিকতা

অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গাজায় ইসরাইলের পাশবিকতা

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন হামাস কয়েক হাজার রকেট লঞ্চারসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে ইসরাইলের ভেতরে হামলা চালায়। ইসরাইলে গত কয়েক দশকের ভেতর ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী কোনো সংগঠনের এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী আঘাত। কিন্তু এর জবাবে সামরিক অভিযানের নামে গাজায় অবস্থানরত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা ইসরাইল চালাচ্ছে, তা যুদ্ধাপরাধের শামিল।

মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার ‘আল–আহলি আরব’ নামের হাসপাতালে কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এমন পাশবিক ঘটনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এ হামলাকে স্পষ্ট ‘গণহত্যা’ অভিহিত করেছেন জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। এমন হত্যাকাণ্ড ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ‘জঘন্য অপরাধ’ অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

এছাড়াও নিন্দা জানিয়েছে কাতার, তুরস্ক, মিসর, সিরিয়া, ইরানসহ মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন আরব লীগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পশ্চিমাপন্থি হলেও এ হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী হাসপাতালগুলো ‘নিরাপদ স্থান’ হিসাবে বিবেচিত।

এ আইন সবার জন্যই প্রযোজ্য। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে অবিলম্বে ইসরাইলের এমন হামলা বন্ধের দাবি উঠেছে। এদিকে এ ঘটনার পরপরই জর্ডানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

ভূমধ্যসাগরের দুই উপকূলীয় ভূখণ্ড ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস বেশ পুরোনো। গত ৭৫ বছরে দুপক্ষের দ্বন্দ্বে বারবার কেঁপে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের এ অঞ্চল। তবে গত ৭ অক্টোবর থেকে চলে আসা দুই পক্ষের নজিরবিহীন সংঘাতে রীতিমতো ফাটল ধরেছে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে। চোখ-কান বন্ধ করে গোপনে ইসরাইলের জন্য কাঁদছে এক পক্ষ। আরেক পক্ষ বুক টান করে দাঁড়িয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তবে দিনশেষে মানবতার বিচারে ফিলিস্তিনিদের পক্ষেই পাল্লা ভারী হচ্ছে।

ফিলিস্তিনিরা যুগের পর যুগ ধরে চরম অবিচারের শিকার। তাদের বাস্তুচ্যুত করে ইসরাইল যে দখলদারত্ব কায়েম করেছে, তা রোধে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যত কিছুই করতে পারেনি। আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি নিজস্ব আবাসভূমি নিশ্চিত করতে পারেনি জাতিসংঘ। তাই চলমান এ সংঘাতের, নিরীহ মানুষের প্রাণহানির দায় শুধু ইসরাইল নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এড়াতে পারে না। আমরা বারবার বলে এসেছি, এ সমস্যার একমাত্র ন্যায়সংগত সমাধান হলো একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। প্রকারান্তরে ইসরাইলের স্বার্থই রক্ষা করে এসেছে তারা। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র কঠোর ভূমিকা নিলে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান কোনো কঠিন বিষয় নয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম