রেমিট্যান্স প্রবাহে শ্লথগতি
ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ সহজ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলোয় কমে গেছে ডলারের সরবরাহ; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হচ্ছে না ডলার। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। ব্যাংক ও খোলাবাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে নগদ ডলার। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, আমদানির জন্য চাহিদার অর্ধেক ডলারও মিলছে না। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাড়ানোর কাজটি বেশ কঠিন।
এ পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে না পারলে অর্থনীতিতে বিদ্যমান সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি কমিয়ে সংকটের সমাধান করা যাবে না। এতে সমস্যা আরও বাড়বে। কাজেই সংকট সমাধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এজন্য হুন্ডি বন্ধ করতে হবে।
জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে বিদেশ গেছেন ৬ লাখ ১৫ হাজার কর্মী। চলতি বছরের একই সময়ে গেছেন ৬ লাখ ১৮ হাজার কর্মী। বর্তমানে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীর সংখ্যা গত জুন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখে। বিদেশে যাওয়া নতুন কর্মী এবং মোট প্রবাসীর সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স কমায় রিজার্ভ বাড়ছে না। এদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার, যা পুরো অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অবৈধ হুন্ডি ব্যসায়ীদের কারণেই রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ হুন্ডির কবলে পড়েছে। যেসব দেশে হুন্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেসব দেশের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ১০টি দেশ থেকে। এর মধ্যে প্রধান ছয়টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমছে। জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ হুন্ডির কারণে কমে গেলে তা বন্ধ করতে সরকারের একটি প্রতিনিধিদল দেশটিতে গিয়ে এর কারণ অনুসন্ধান করে এবং এর ভিত্তিতে ওই দেশের সঙ্গে আলোচনা করে হুন্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে ইউরোপ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও বহু দেশ থেকেই কমছে। এর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে আশা করা যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।
হুন্ডি পদ্ধতিতে কোনো কাগজপত্র স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় না। হুন্ডি ব্যসায়ীরা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরের কেউ রেমিট্যান্সবিষয়ক তথ্য জানে না। রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবার এটিকে নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক মনে করে। হুন্ডি পদ্ধতির সাধারণ সুবিধাগুলোর সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধাগুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর পদ্ধতি সাধারণ মানুষের জন্য সহজ ও উপযোগী করার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রবাসীরা যাতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হন, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থ পাচারসহ দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়বে কিনা সন্দেহ।