Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

গলার কাঁটা ক্যাপাসিটি চার্জ

অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গলার কাঁটা ক্যাপাসিটি চার্জ

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দেওয়া ক্যাপাসিটি চার্জ সরকারের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে জ্বালানি সংকটে প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে, অন্যদিকে বন্ধ থাকার পরও গুনতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনে থাকুক বা না থাকুক, চুক্তি অনুসারে কেন্দ্র ভাড়া পায় সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটাই হলো ক্যাপাসাটি চার্জ। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ সাড়ে ১৪ বছরে সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে মার্কিন ডলারে। আরও জানা যায়, এখনো বকেয়া আছে আনুমানিক সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ খাতে দুরবস্থার জন্য মূলত এই ক্যাপাসিটি চার্জই দায়ী। উৎপাদন না করলেও টাকা পরিশোধ করার বিষয়টি সাধারণ যুক্তিতে মেনে নেওয়া কঠিন। প্রশ্ন উঠেছে, এ বিশাল অঙ্কের টাকা গুটিকয় মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার অধিকার কোনো সরকার রাখে কি না। কেননা এতকিছুর পরও দেশে বিদ্যুৎ সংকট কাটেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি নয়; এর বিপরীতে ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে।

চাহিদার দ্বিগুণ উৎপাদনের পরও যদি দেশবাসীকে বিদ্যুৎ সংকটে ভুগতে হয়, তাহলে সংগতভাবেই প্রশ্ন ওঠে-যে সক্ষমতা কাজে আসে না, তাকে সক্ষমতা বলা যায় কি? বস্তুত অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভরতাও এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এ খাতে বড় আকারের বকেয়া পড়েছে। জানা যায়, কয়লায় বকেয়া প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা; এলএনজি আমদানির শুল্ক-কর বাবদ বকেয়া ১২ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি আরও বকেয়ার কথা বলছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। তাদের মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২৭ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল পাবে, যার মধ্যে বেসরকারি খাতের কেন্দ্রগুলো পাবে ২০ হাজার কোটি টাকা।

অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান, চাহিদা বিবেচনায় এত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এখন এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ আছে, দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আপৎকালীন অর্থাৎ ২-৩ বছরের জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলেও দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ না নিয়েও বিপুল অঙ্কের টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে।

ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েই চলেছে। আমরা মনে করি, এ খাতে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে ইতোমধ্যেই সরকারকে বড় ধরনের অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। মানুষ এ বোঝা আর কতদিন বহন করবে। জনগণের অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার চুক্তি থেকে সরকারের বের হয়ে আসা উচিত। মেয়াদ শেষ হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে আর চলতে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সরকার এ ব্যাপারে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে, এটাই কাম্য।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম