উত্তরপত্র মূল্যায়নে অবহেলা, পরীক্ষকের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
স্কুল বা কলেজ পর্যায়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যেই নয়, অভিভাবকদের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ ও উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হয়। ভালো রেজাল্টে উচ্ছ্বাস এবং আশানুরূপ না হলে বিষাদ গ্রাস করে উভয়কেই। খারাপ ফলাফলের কারণে অভিভাবকদের বিষোদ্গার শিক্ষার্থীর মনে বিরূপ প্রভাবও ফেলে, শিক্ষার পরবর্তী ধাপেও যা থেকে যায়। কিন্তু বিরূপ ফলাফলের দায় কি শুধু পরীক্ষার্থীর? পুনঃনিরীক্ষণের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, এ দায় পরীক্ষকের ওপরও বর্তায়।
শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, চলতি বছরের ২৮ জুলাই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শুধু যশোর শিক্ষা বোর্ডেই পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের পর রেকর্ড ২৭৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। তাদের মধ্যে অকৃতকার্য ৫৯ পরীক্ষার্থী বিভিন্ন গ্রেডে উত্তীর্ণও হয়েছে। আগের বছর ফল পরিবর্তনের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০। এ বছর সারা দেশে ফল পরিবর্তনের হিসাব দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। ১০টি সাধারণ বোর্ডের প্রকাশিত পুনঃনিরীক্ষণের ফল থেকে জানা যায়, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ করে ১১ হাজার ৩৬২ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৮১১ পরীক্ষার্থী, ফেল থেকে পাশ করেছে ২ হাজার ২১২ পরীক্ষার্থী। ফেল থেকে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। বাকি পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে বিভিন্ন গ্রেডে। চলতি বছর শিক্ষার্থীদের এত সংখ্যক চ্যালেঞ্জ এবং তাতে ফল পরিবর্তনের রেকর্ড দেখে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরীক্ষকদের মনোযোগ ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। দায় স্বীকার করে শিক্ষা বোর্ডের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পরীক্ষক-নিরীক্ষকদের সতর্ক করার পরও যাদের ভুলে এমনটা হয়েছে, তাদের আগামীতে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, উত্তরপত্র নিরীক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রথমে খারাপ করা শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকদের একটি মাস কতটা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে হয়েছে। উল্লেখ্য, পরীক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যা করা হয় তা পুনঃনিরীক্ষণ, পুনঃমূল্যায়ন নয়। পুনঃনিরীক্ষণ মানে খাতায় প্রদত্ত নম্বরের যোগ-বিয়োগের হিসাব। তাই নিরীক্ষণের গুরুত্ব থাকলেও পরীক্ষকের জোর দেওয়া উচিত খাতা মূল্যায়নে। এক্ষেত্রে কর্তব্যে অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার কোনো সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরীক্ষক সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশা।