
প্রিন্ট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বিশ্বের যে কোনো দেশের কোম্পানির তুলনায় বাপেক্সের গড় সাফল্য সন্তোষজনক হলেও প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়ানো প্রসঙ্গে নানা রকম মতামত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে কখনোই কর্তৃপক্ষ বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে সেভাবে নজর দেয়নি। তাদের মতে, কয়েক দশক আগেই যদি প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়াতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হতো তাহলে গ্যাসের জন্য আমাদের এভাবে বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো না। বাপেক্সের সক্ষমতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো গেলে দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে যে সক্ষম হবে, এর প্রমাণ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে দিয়েছে।
গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চরম অর্থ সংকটে পড়েছে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম প্রোডাকশন অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি (বাপেক্স)। প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত নগদ অর্থের সংকটের বিষয়টি উদ্বেগজনক। আইন অনুযায়ী গ্যাস বিক্রির ওপর ভ্যাট বাবদ পাওয়া অর্থ ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জরিমানা এড়াতে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে থাকা এফডিআর ভেঙে অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে বাপেক্সকে। সরকারি কোষাগারের পাওনা পরিশোধ, টেকসই অনুসন্ধান, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা এবং বাপেক্সের আর্থিক তারল্য সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২২ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্দেশনা অনুযায়ী বাপেক্স তার উৎপাদিত গ্যাস বিতরণ কোম্পানিকে সরবরাহ করে। নতুন কূপ খনন ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের জন্য বাপেক্সের বিপুল অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় বাপেক্সের ফান্ড সংকট তৈরি হয়েছে। জানা যায়, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে গ্যাস বিক্রির বিলসহ বকেয়া রয়েছে ১১৪ কোটি টাকা।
সংকটে থাকলেও বাপেক্স কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত যেভাবে বোনাস দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা যায়, শ্রীকাইল ৪, তিতাস ১, ২, ৫, ১০ এবং শাহবাজপুর ৪ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজ পরিচালনার জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চারবার বিশেষ বোনাস (মূল বেতনের সমপরিমাণ) দেওয়া হয়। অস্থায়ী শ্রমিকদেরও বিভিন্ন সময় বোনাস দেওয়া হয়। শুধু বিশেষ বোনাস নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদও অর্থ নিচ্ছেন বাপেক্স থেকে। অভিযোগ আছে, বাপেক্সের একটি সিন্ডিকেট বিশেষ বোনাসের নামে সরকারি অর্থ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। এমনকি ওয়ার্কওভারের (পুরোনো কূপ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ) মতো নিয়মিত কাজের জন্যও এ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশেষ বোনাস নিয়েছেন। অথচ কিছুদিন পরপর বলা হচ্ছে, অর্থ সংকটে বড় কোনো প্রকল্প হাতে নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। পুরোনো গ্যাসকূপে ওয়ার্কওভারের মূল কাজ করেন খনন বিভাগের কর্মীরা। ওই কাজে প্রকৌশল বিভাগের সহায়তার প্রয়োজন হয়। দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করেন অতিরিক্ত অর্ধশত অস্থায়ী শ্রমিক। কিন্তু বিশেষ বোনাস দেওয়া হয়েছে বাপেক্সের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এটা কতটা যৌক্তিক। এ ধরনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্তৃক্ষকে আরও সতর্ক হতে হবে। বাপেক্সের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নানা খাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার। বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। তাদের এমন কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া অনুচিত, যা তাদের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।