Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

দাপুটে সিন্ডিকেট

দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দাপুটে সিন্ডিকেট

ফাইল ছবি

দেশের মধ্য ও নিম্ন-আয়ের মানুষ ভালো নেই। নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি বিপাকে ফেলেছে চরমভাবে। বলা হচ্ছে, দেশে নিত্যপণ্যের উৎপাদনে কোনো ঘাটতি নেই, সরবরাহ ব্যবস্থাও স্বাভাবিক; কিন্তু এরপরও দাম বাড়ছে দ্রুতগতিতে। পাশাপাশি সব ধরনের সেবার মূল্যও বাড়ছে বেপরোয়াভাবে। এর ফলে ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। রোববার যুগান্তরে প্রকাশ, ভোক্তার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। জীবনযাত্রার খরচ যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। ফলে সংসারের প্রয়োজন মেটাতে মানুষ ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। বাজারে গিয়ে মানুষ ক্ষোভ ঝাড়ছেন সরকারের বিরুদ্ধে। দেখা যাচ্ছে, সিন্ডিকেট করে একটি চক্র পণ্যের দাম বাড়িয়ে প্রতিবছর ভোক্তাকে জিম্মি করে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করলেও সরকার কার্যত অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। ফলে বাজার সিন্ডিকেটের দাপুটে উত্থান ঘটছে নির্বিঘ্নে।

সম্প্রতি ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে উৎপাদন-পরিবহণসহ কয়েকটি খাতের খরচ মিলিয়ে পাইকারি পর্যায়ে একটি ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হওয়ার কথা ১১ টাকা ৩২ পয়সা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দামে। এর মানে, প্রতি ডিমে অযৌক্তিকভাবে ভোক্তার কাছ থেকে ৩ টাকা ৬৮ পয়সা আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি এ টাকা খামারি, মধ্যস্বত্বভোগী ও খুচরা বিক্রেতারা হাতিয়ে নিচ্ছে। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কেন প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। পরিতাপের বিষয়, বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন, সিন্ডিকেটকে নাড়া দিলে যদি তারা বাজার থেকে পণ্য উঠিয়ে নেয়, তবে ভোক্তাদের জন্য তা কষ্টকর হবে। এক্ষেত্রে শুধু আইন দিয়ে প্রতিরোধ নয়, মূল্যবোধেরও প্রয়োজন আছে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, সিন্ডিকেটের ক্ষমতা কি এতই বেশি, যে তারা নিজেদের সরকারের চেয়ে শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান মনে করে? একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই আশা করা যায় না। এ ধরনের বক্তব্য বরং সিন্ডিকেটকেই আরও উৎসাহিত করে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্টজনরা বলছেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ার বিকল্প নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের, তারা যদি ব্যর্থ হন, তাহলে তাদের পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। তারা বলছেন, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ৫ থেকে ৬টি করপোরেট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে ক্রেতারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির সঙ্গে যেসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বা করপোরেট কোম্পানি জড়িত সেগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আদতে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রথম কাজ বিকল্প সরবরাহ নিশ্চিত করা। বাজার দিয়ে বাজারের মোকাবিলা করা। একই সঙ্গে কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে যে বিধান রয়েছে তার মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এ অসাধু চক্রকে বাজার কারসাজিতে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম