Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য: এ পরিস্থিতির শেষ কোথায়?

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য: এ পরিস্থিতির শেষ কোথায়?

দেশে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভালো নেই। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে আকাশ ছুঁয়েছে, তাতে সৎ উপার্জনকারীদের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। প্রতিটি ডিমের দাম বর্তমানে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫-২০ টাকা। মাছ-মাংসে হাত দেওয়ার উপায় নেই।

অনেকে বলছেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে ‘আগুনে হাত পুড়ে’ যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তার জন্য বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের আলুভর্তা ও ডিম-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দুবেলা চলত, তারাও এখন প্রায় নিরুপায়। বাড়তি দামের কারণে পুষ্টির চিন্তা দূরে থাক, ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে।

এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের সেবার দামও লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েই চলেছে; কিন্তু আয় বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প-আয়ের মানুষ নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করলেও তাদের হাঁসফাঁস অবস্থার নিরসন হচ্ছে না।

এটা ঠিক, করোনা মহামারির রেশ কাটতে না কাটতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যেভাবে অতিমুনাফার লোভে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, তা সাধারণ মানুষের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ভোক্তার পকেট কাটতে গিয়ে সিন্ডিকেট চক্র নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রাকেই ফেলেছে হুমকির মুখে।

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বাজারে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হলেও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো সরকারি সংস্থাগুলো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দূরে থাক, তাদের খুঁজে বের করতেও দেখছি না আমরা। যদিও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দাবি, ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বর্তমান পরিস্থিতি বিরাজ করছে; তবে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে বাজারে তদারকি করা হচ্ছে; অসাধু পন্থায় যারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে বাস্তবে এ বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

আশার কথা, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো বাংলাদেশেও নির্দিষ্ট পরিমাণে ছয়টি নিত্যপণ্য রপ্তানিতে সম্মত হয়েছে ভারত সরকার। বাংলাদেশের জন্য চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন-এ ছয় পণ্যের কোটা নির্ধারণের কাজ চলছে। কোটা সুবিধা পাওয়া গেলে ভারত যখন-তখন বাংলাদেশে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ করতে পারবে না।

বাংলাদেশ প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণের এই পণ্য ভারত থেকে আমদানি করতে পারবে। ফলে দেশের বাজারে সেসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়তে দেখা যাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে আমদানিনির্ভর পণ্য ছাড়াও দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য কেন বাড়ছে, এর পেছনে কারা জড়িত, অতিমুনাফার অর্থ কোথায় যাচ্ছে-এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও জরুরি। বাজারে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে, তার লাগাম টানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কঠোর মনিটরিংয়ের পাশাপাশি দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে-এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম