হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য: কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই কমছে না; বরং কোথাও কোথাও তা আরও বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সরকারি জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। জানা যায়, পেটের ব্যথা নিয়ে আসা ওই যুবককে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে দুটি ওষুধ ও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দেন।
এ সময় চিকিৎসকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেওয়া এক দালাল তাকে সুলভে ওষুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে হাসপাতালের পাশে একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যায়। রোগীর ব্যথা বেশি থাকায় ওই দালাল নিজেই একটি ইনজেকশন নিয়ে তার শরীরে পুশ করে। এতে রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। এর কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একজন দালালের দৌরাত্ম্য কতখানি বাড়লে সে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রবহির্ভূত ইনজেকশন রোগীর শরীরে পুশ করতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। ওই দালালকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
বস্তুত বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়ত পড়ছেন দালালদের খপ্পরে। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে ওষুধ কিনতে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে দালালদের ফাঁদে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। জানা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকেই টার্গেট করা হয় রোগীদের। এরপর ওয়ার্ড পর্যন্ত পিছু নেয় এসব দালাল। ন্যায্যমূল্যে ওষুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে রোগীর স্বজনদের নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট ওষুধের দোকানে। সেখানে আদায় করা হয় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে চার-পাঁচগুণ বেশি টাকা।
রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হয় হাসপাতালের নিকটবর্তী প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেম্বার ও ওয়ার্ডের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে দালাল। রোগী চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হলেই দালাল ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চলে যায় নির্দিষ্ট ওষুধের দোকান বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এ চিত্র অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের। অভিযোগ রয়েছে, অনেক চিকিৎসকও এ অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত।
এর ফলে একদিকে রোগী ও তাদের স্বজনরা যেমন হয়রানির শিকার ও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোকে দালালমুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দালালদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে হাসপাতালগুলোতে ঘন ঘন অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করি আমরা।