উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়বহুল পরামর্শক: ব্যয়ে লাগাম টানা বাঞ্ছনীয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈদেশিক ঋণের উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শকের পেছনে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের লাগাম টানা যাচ্ছে না। বস্তুত বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান আছে এমন প্রকল্পে পরামর্শক নেওয়াটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এবার একটি মহাসড়ক উন্নয়নে পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭০৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৬৬ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং বিদেশি ঋণের টাকা থেকে ১ হাজার ২৪০ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
‘হাটিকুমরুল-বনপাড়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প : বনপাড়া-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ অংশ (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। স্বভাবতই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুক্রবার যুগান্তরে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে রয়েছে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাবও। এক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারেরর নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৭৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং এআইআইবি’র ঋণ থেকে ৬ হাজার ৯৮০ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হবে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলা, পাবনার ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, মিরপুর, কুষ্টিয়া সদর এবং ঝিনাইদহ উপজেলার শৈলকুপা, হরিণাকুন্ড ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলায়। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।
উদ্বেগের বিষয় হলো, মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ অর্থই ব্যয় হবে শুধু পরামর্শকের পেছনে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিদেশি পরামর্শক কী কী কাজ করবেন? আদৌ সেসব কাজের প্রয়োজন আছে কিনা? যদি প্রয়োজন থেকেই থাকে, তাহলে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞ দিয়ে সেগুলো করা সম্ভব কিনা? সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর দীর্ঘদিন ধরে এরকম অনেক কাজই করেছে। সব ক্যাটাগরির সড়কই প্রচুর নির্মাণ করেছে তারা। সেই অভিজ্ঞতা কেন এখানে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এছাড়া বিদেশি পরামর্শকদের এত টাকা দিলে তা ডলারে পরিশোধ করতে হবে। সেটিও একটি চিন্তার বিষয়। এত অস্বাভাবিক খরচের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।
প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে বাস্তবসম্মত ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আমরা অস্বীকার করছি না। তবে এর অর্থ এই নয় যে, পরামর্শক নিয়োগের নামে বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করতেই হবে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি ও উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থায়ন করে, সেসব প্রকল্পে বেশি পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। অনেক সময় দাতা সংস্থাগুলো পরামর্শক নিয়োগ করার জন্য চাপ দিয়ে থাকে।
কিন্তু সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সেই চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে কেন? উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঢালাওভাবে পরামর্শক নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীরও স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) এক সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘চোখ বন্ধ করে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া যাবে না।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে উলেখিত উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয়ের লাগাম টানা হবে-এটাই প্রত্যাশা।