দুই বড় দলের সমাবেশ
নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীতে বুধবার বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও তা থেকে এমন ঘোষণা এসেছে, যা সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে পারে।
বিকালে নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের পদত্যাগের ‘একদফা’ দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন।
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দলের পক্ষ থেকে এটাই তাদের একদফা বলে জানিয়েছেন তারা। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বড় দুই দলের একই ইস্যুতে অর্থাৎ নির্বাচন কার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে পরস্পর বিপরীত অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বায়তুল মোকাররমের সামনে ও নয়াপল্টনে যথাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা ছিল লোকে লোকারণ্য। জনসমাবেশ ঘটিয়ে দুই দলই দেশবাসীর কাছে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিতে চেয়েছে।
সমাবেশে আসা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের কোনো ভোগান্তির খবর পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাবেশে যাওয়ার পথে বুধবার বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও বাধা দেওয়ার ঘটনার পাশাপাশি নানা স্থানে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ৭৩ জনকে আটক করেছে।
এর মধ্যে সাভারে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ বিএনপির ৬০ নেতাকর্মীকে আটক করে। এছাড়া ভাড়া করা ৪০টি গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে খবরে প্রকাশ। আবার কেরানীগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নির্দেশে বুড়িগঙ্গায় খেয়া পারাপারেও বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য পুলিশ জানিয়েছে, নাশকতা ঠেকাতেই চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে বড় দুই দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, এটি স্বস্তিদায়ক। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও ধারণা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল ঢাকায় অবস্থান করছে বলেই দুদলের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, বাইরের চাপের কারণে নয়, স্ব-উদ্যোগেই সহিষ্ণুতার রাজনীতির চর্চা করতে হবে। সমাবেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় দল দুটি যে অবস্থান নিয়েছে, তা পরিস্থিতিকে আরও সংঘাতময় করবে। অতীতে বিভিন্ন কারণে এবং ক্ষমতার পালাবদলের প্রেক্ষাপটে দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাসের পর মাস হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে সহিংসতায় বহু প্রাণহানি হয়েছে।
সেসময় দেশজুড়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদহানি হয়েছিল, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল অর্থনীতিতে। মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে নানা সংকটে রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক সংকট দূর করার জন্য আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন।
এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তার অবসান হওয়া দরকার। কাজেই দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার ও বিরোধী দুপক্ষই একদফার অবস্থান থেকে বেরিয়ে সংলাপের টেবিলে বসবে-এটাই প্রত্যাশা।