Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা: হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা: হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি

ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আসা মানুষের লাইনও প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার অভাবে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এখনো অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করানো যাচ্ছে না। ডেঙ্গুর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড বা কর্নার খোলা হয়নি। ফলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অন্যান্য রোগীর সঙ্গে থেকে।

সুস্থতা-পরবর্তী জটিলতা নিরসনে পোস্ট ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া ক্লিনিকও চালু করা হয়নি। অনেক হাসপাতাল আঙিনায় নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। এ বাস্তবতায় রোগীরা তো বটেই, জনস্বাস্থ্যবিদরাও হাসপাতালের সেবাদান ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

আমরা দেখেছি, বেসরকারির তুলনায় সরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান ভালো নয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, কর্মচারী ও দালালদের কারণে হাসপাতালের মানোন্নয়ন করা যাচ্ছে না। কর্মচারীদের নিজ নিজ কাজে অবহেলার জন্যই হাসপাতাল পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্ন হচ্ছে না, রোগীদের সঙ্গে থাকা লোকদের ভিড় থামানো যাচ্ছে না, দালালদের দৌরাত্ম্য কমানো যাচ্ছে না। এর ফলে হাসপাতালের সেবার মানও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেওয়া যাচ্ছে না।

তিনি এও বলেছেন, প্রতিদিন সারা দেশে অন্তত ১০ লাখ সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসে। এই ১০ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য জেলা শহর থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায়েও সরকারি হাসপাতাল করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহানোর কথা নয়। তত্ত্বাবধায়করা তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মান বৃদ্ধিতে মনোযোগী হবেন, এ প্রত্যাশা তো আছেই; সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নিয়েও তাদের উদ্যোগী হতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেছেন, এবার ডেঙ্গুর যে ধরন দেখা যাচ্ছে, তাতে আক্রান্তদের দ্রুত শারীরিক অবনতি হচ্ছে। তাই জ্বর প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও রোগীকে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। এক্ষেত্রে প্রতিটি হাসপাতালে পৃথকভাবে ডেঙ্গু অবজারভেশন রুম খোলা যেতে পারে, যেখানে তারা সার্বক্ষণিক ফলোআপে থাকবেন। কারণ বাড়ি পাঠিয়ে দিলে পরিস্থিতি গুরুতর না হলেও আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ানো মশা আরেকজন সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে।

পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় এখন প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র করাও সময়ের দাবি। সেখানে সরকারিভাবে কোভিডের মতো তাৎক্ষণিক ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তাকে বাড়ি না পাঠিয়ে সেখানেই বিছানা করে মশারির মধ্যে রাখা হবে। রোগীর দেখভালে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স নিয়োজিত থাকবে। সেই সঙ্গে পরিবারের সদস্য থাকবে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে।

এখন ঢাকা শহরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বেশি দরকার। মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং কেউ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে তাকে জানাতে হবে। এ পন্থা অবলম্বন করতে পারলে আশা করা যায়, বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশেই সম্ভব হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম