গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ
মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে কিছু অর্থলোভী খামারি গবাদি পশু দ্রুত মোটাতাজা করতে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে বেশি মাত্রায় কৃত্রিম খাবার খাওয়াচ্ছে বলে জানা গেছে। গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির খাবার; ভিটামিন, স্টেরয়েড, আয়রনজাতীয় ওষুধ, ইউরিয়া সারমিশ্রিত খড় খাওয়ানো ছাড়াও ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন প্রয়োগের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব গবাদি পশু কৃত্রিম উপায়ে দ্রুত মোটাতাজা করা হয়, সেগুলোর মাংস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া স্টেরয়েড ও হরমোনাল ওষুধ বিক্রি নিষেধ। প্রশ্ন হলো, অর্থলোভী খামারিরা স্টেরয়েড ও হরমোনাল ওষুধ সংগ্রহ করছে কীভাবে? যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জানা যায়, অতিরিক্ত মাত্রায় স্টেরয়েডের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রাণীর দেহ স্বাভাবিকভাবেই ফুলে যায়; চর্বি ও কোষ বৃদ্ধি পায়; পশুর শরীরে পানি জমে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু মাংস বাড়ে না। এতে পশুর হৃৎপিণ্ড, কিডনি, যকৃৎসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় এসব ওষুধ সেবনে হার্ট অ্যাটাক করে পশু মারাও যেতে পারে। যেসব পশুকে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধসেবন করানো হয়, সেসব প্রাণীর মাংস নিয়মিত খেলে মানুষের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধমনি চিকন হয়ে হৃদরোগ ও ব্রেইন স্ট্রোকও হতে পারে।
যে পশুকে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধসেবন করানো হয়, সেই পশুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে স্টেরয়েডের উপাদান প্রবেশ করতে পারে। এতে কিডনির সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে। এসব তথ্য খামারিরা জানেন না, বিষয়টি এমন নয়। বস্তুত অসৎ খামারিরা বেশি দামের আশায় কম সময় ও স্বল্প বিনিয়োগে গরু-মহিষ মোটাতাজাকরণের বিভিন্ন পদ্ধতি বেছে নেয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে কোনো মাত্রায় স্টেরয়েডের ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই খামারিসহ সংশ্লিষ্টরা যাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্টেরয়েড ব্যবহার করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। তারা গবাদি পশু মোটাতাজা করতে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে বাড়তি কী কী যোগ করে, তা মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। কর্তৃপক্ষের জোরালো তৎপরতা না থাকলে অসৎ খামারিসহ সংশ্লিষ্টদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা যে বাড়বে, তা সহজেই অনুমেয়।