নারকোটিক্সের তালিকা: গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সোমবার মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের অভিযান জোরদারের ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসাবে সারা দেশের প্রায় ৭০ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই তালিকায় রাঘববোয়াল মাদক ব্যবসায়ী কারও নাম নেই। সোমবার যুগান্তরের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুল আলোচিত কক্সবাজারের সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুর রহমান বদি কিংবা রাজশাহীর সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর মতো রাঘববোয়ালদের নাম তালিকায় যুক্ত করার সাহস দেখাতে পারেনি অধিদপ্তর। অথচ দুবছর আগে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেওয়া তালিকায় এদের মতো অনেক প্রভাবশালীর নামও ছিল। অবশ্য নাম থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি।
জানা গেছে, এবারের তালিকায় যে ৭০ হাজার নাম যুক্ত করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই মৌসুমি মাদক ব্যবসায়ী। অথচ খোদ নারকোটিক্স কর্মকর্তারাই বলছেন, বাস্তবে এ সংখ্যা ৫ লাখের কম নয়। ক্ষমতাসীন দলের শেল্টারে থাকা প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীরা রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ আছে, রাজধানীর প্রকাশ্য মাদকের স্পটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একশ্রেণির নারকোটিক্স কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য নিয়মিত মাসোহারা আদায় করে থাকে। আবার মাদকের সঙ্গে অবৈধ অর্থ আয় ও পাচারের যোগও রয়েছে। সম্প্রতি ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদক খাতকে ব্যবহার করে অর্থ পাচারে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর গোটা বিশ্বের হিসাবে রয়েছে পঞ্চম স্থানে। এ মাদক ক্রয়ের মাধ্যমে প্রতিবছর ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়। বিষয়টি শুধু লজ্জাজনক নয়, একই সঙ্গে উদ্বেগজনকও। মাদকের এ অবাধ প্রবেশ বলে দিচ্ছে, এর বিষবাষ্পের কবলে পড়েছে কিশোর, তরুণ থেকে শুরু করে নানা বয়সের ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। কর্তৃপক্ষকে তাই মাদকের অবাধ প্রবেশ রোধ করতে হবে। শুধু খুচরা কারবারি নয়, মূল গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নারকোটিক্সসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। মাদকের কুফল সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু দেশকে মাদকমুক্ত করার স্লোগান নয়, মাদকের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান দেখতে চাই আমরা।