চামড়ার দাম নির্ধারণ: সব পক্ষের স্বার্থ দেখা উচিত
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এবার কুরবানির পশুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে গতবারের মতোই চামড়ার বাজারে বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কুরবানির গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে গতবারের চেয়ে মাত্র ৩ টাকা বাড়িয়ে ঢাকায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪-৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা করা হয়েছে। তবে খাসি ও ছাগলের চামড়ার দাম বাড়ানো হয়নি। গতবারের মতোই খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং ছাগলের ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বর্তমান বাজার প্রেক্ষাপটে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, মার্কিন ডলারের দাম গতবারের চেয়ে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ঈদুল আজহার সময় ১ ডলারের দাম ছিল যেখানে ৯৬ টাকার মতো, সেখানে বর্তমানে রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১০৭ টাকা। অর্থাৎ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিতে ১১ শতাংশ বেশি দাম পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কাজেই চামড়ার দামও সেই অনুপাতে বাড়ানো উচিত ছিল। বস্তুত চামড়ার দাম নির্ধারণে ফড়িয়া, আড়তদার, মৌসুমি ব্যবসায়ী, ট্যানারি মালিকসহ এ ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
চামড়াশিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাতগুলোর একটি। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে রাষ্ট্র। সারা বছরের পশুর চামড়ার মোট সংগ্রহের ৫০ শতাংশ আসে কুরবানি থেকে। এবার ঈদুল আজহায় কমবেশি ১ কোটি ২৫ লাখ পিস পশুর চামড়া সংগ্রহ হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ চামড়ার বাজার ঘিরে কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা টার্নওভার হবে, এমনটিই প্রত্যাশা। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে, কুরবানির পশুর চামড়ার সঙ্গে শুধু চামড়াশিল্প নয়, দেশের সার্বিক অর্থনীতির স্বার্থ জড়িত। বিশেষ করে ডলার ও অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে দেশের অন্যতম এই রপ্তানি খাতের স্বার্থরক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কুরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা, নদীনালা বা রাস্তায় ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত অর্থ না পেলে চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাছাড়া অতীতে চামড়ার বাজারে ব্যবসায়ীদের কারসাজির ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মূলত চামড়ার ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তবে কুরবানির চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন চামড়ার টাকার প্রকৃত হকদার দেশের দরিদ্র মানুষ। প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার কারণে চামড়ার একটি বড় অংশ নষ্ট করে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামগ্রিকভাবে চামড়াশিল্প। চামড়া খাতে সময়মতো ঋণ না পেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যেই এ খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমাদের রপ্তানি পণ্যের খাত সীমিত। কাজেই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অথবা কারও কারসাজির কারণে অথবা সময়মতো ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে চামড়াশিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।