মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের উদ্বেগ
পররাষ্ট্রনীতিতে আরও কৌশলী হওয়া জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ কংগ্রেসম্যান ২৫ মে শেখ হাসিনা সরকারের কড়া সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কংগ্রেসম্যান স্কট প্যারি, ব্যারি মুর, টিম বার্চেট, ওয়ারেন ডেভিডসন এবং কেইথ সেলফ চিঠিতে জানিয়েছিলেন, মার্কিন সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশের দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একাধিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির পরও দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি তাদের সেই বক্তব্যের সঙ্গে দেশটির আরেক কংগ্রেসম্যান বব গুড যোগ দিয়েছেন। ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের পঞ্চম কংগ্রেশনাল ডিসট্রিক্টের রিপাবলিকান এই কংগ্রেসম্যান শুক্রবার তার ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে শেখ হাসিনা সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। সেসময় নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসাবে ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরপরই দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে যেতে দেখা যায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচও এক প্রতিবেদনে বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানায়, এ থেকে বোঝা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার সক্ষমতা বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে। তবে প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম কমলেও বাংলাদেশে সরকারের প্ররোচনায় মানবাধিকারকর্মী ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অন্য পাঁচ কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বব গুডের সংহতিমূলক ওই বিবৃতিতে আরেকটি বিষয় ফুটে উঠেছে; সেটি হচ্ছে ভূরাজনীতি। বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যেভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, মানবাধিকার পরিস্থিতির বাইরেও তাদের উদ্বেগের বিষয় এ সরকারের চীন-রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। এটি ঠিক, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভূরাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করে রাশিয়াকে বাগে আনতে পশ্চিমা দেশগুলোর চেষ্টা মস্কোর আগ্রাসনের পর পুরোপুরিই প্রকাশ্যে এসেছে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়া-চীন ও মার্কিন মিত্র পশ্চিমাদেশগুলো ভিন্ন দুটি বলয় গড়তে চাইছে। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বরাবরই ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফলে সরকারকে শুধু করোনা মহামারি ও পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাই নয়, পররাষ্ট্রনীতিতেও আরও কৌশলী হতে হবে।