ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধি
বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার বিকল্প নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে দেশবাসীকে এডিস মশাবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ইতোমধ্যে দেশে দেড় হাজারেরও বেশি ডেঙ্গি রোগী শনাক্ত করা হয়েছে; আক্রান্ত কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। দেশে গত বছরের তুলনায় এ পর্যন্ত পাঁচগুণ ডেঙ্গি রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। কাজেই রোগটি প্রতিরোধে এখনই জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, মশক নিধনে সাময়িক পদক্ষেপে সুফল পাওয়া যায় না, বছরব্যাপী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হয়। গত বছর দেশে ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। তখন বিশেষজ্ঞরা মশক নিধনে বছরব্যাপী বিশেষ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিশেষজ্ঞদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মশক নিধনে বিশেষ কোনো কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে কি না, তা আমাদের জানা নেই।
এডিস মশার প্রজনন মৌসুম শুরুর আগেই এবার রাজধানীতে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক। এখনো ডেঙ্গির ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা সরকারকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বারবার। সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা আশা করব, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
একসময় ডেঙ্গি ছিল রাজধানী ও বড় শহরকেন্দ্রিক রোগ। এটি এখন প্রায় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে বৃষ্টির জমে থাকা পানি নেই। যেমন বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নিমার্ণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, বাসাবাড়ির জমে থাকা পানি। এডিস মশার আচরণেও পরিবর্তন আসছে। কাজেই এ বিষয়ক গবেষণায় গুরুত্ব আরও বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে এসব বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
২০০০ সালে দেশে যখন ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল, তখন মানুষ ও চিকিৎসক সমাজ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল না। এরপর অনেক সময় গড়িয়েছে। আমরা এখন ডেঙ্গি মোকাবিলায় কতটা সক্ষমতা অর্জন করেছি? জবাবটি যে সন্তেুাষজনক নয়, ইতোমধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যাতেই তা স্পষ্ট। মশা নিয়ন্ত্রণে কী করণীয়, তা আমাদের জানা। এখন দরকার সমন্বিত প্রচেষ্টা। সাধারণ মানুষ যদি দায়িত্বশীল না হন, তাহলে কেবল কর্তৃপক্ষের নানামুখী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এডিস নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।
ডেঙ্গিসংক্রান্ত আমাদের অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো নয়। অভিযোগ রয়েছে, মশকনিধন কর্মকাণ্ড অভিজাত এলাকায় যেভাবে পরিচালিত হয়, অন্যত্র সেভাবে হয় না। কাজেই সর্বত্র এ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এডিস যেহেতু সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে, সেহেতু এটি নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী সারা বছর সমন্বিত কার্যক্রম চালাতে হবে।
অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার পরও অর্থের অভাবে সময়মতো হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না। এভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক রোগী মশারি ব্যবহার করেন না।
এ কারণেও ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। রোগটি যেহেতু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে, সেহেতু বিক্ষিপ্তভাবে পদক্ষেপ নিলে সুফল মিলবে না। সব ধরনের মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে মশা এবং মশাজাতীয় কীটপতঙ্গের উপদ্রব বেড়েছে। কাজেই মশকনিধন যেন ‘মৌসুমি টেনশন’ হিসাবে সীমাবদ্ধ না থাকে-এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।