সংযোগ সড়কহীন সেতু: জনগণের অর্থের কেন এ অপচয়?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এর কি কোনো শেষ নেই? বছরের পর বছর চলছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড। সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, কিন্তু নির্মাণ করা হচ্ছে না এর সংযোগ সড়ক। এমন ঘটনা ঘটছে সারা দেশেই। এ নিয়ে গতকাল যুগান্তরের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রতিবেদন প্রকাশ ছাড়াও এক পৃষ্ঠার বিশেষ আয়োজন করা হয়। তুলে ধরা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের সেতু নির্মাণের সচিত্র তথ্য। গত বছরের ২৪ এপ্রিলও প্রকাশিত হয় এমন প্রতিবেদন।
এরপর গত এক বছরে কিছু সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলেও বেশিরভাগই এখনো অকেজো রয়ে গেছে। বস্তুত বছরের পর বছর, এমনকি এক যুগ ধরেও অকেজো রয়ে গেছে এ ধরনের অনেক সেতু।
জানা গেছে, নেত্রকোনার মদনে ৬ কিলোমিটার সড়কে নির্মিত ১১টি সেতুতেই কোনো সংযোগ সড়ক নেই। এ ধরনের আরও কয়েকটি সেতুর উদাহরণ-মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় কালীগঙ্গা নদীর উপর ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু, যশোরের কেশবপুরে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হরিহর নদের উপর নির্মিত সেতু, সুনামগঞ্জের ছাতকে চেলা খালের উপর ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু, ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় সাতারখালী খালের উপর ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু। সংযোগ সড়ক না থাকায় এসব সেতু মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। বছরের পর বছর অব্যবহৃত থাকায় অযত্ন-অবহেলায় অনেক সেতু নষ্ট ও পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। অনেক সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে সেতুর রেলিং।
জনগণের করের অর্থের এমন অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমন ঘটনাও ঘটেছে, কৃষক আইল দিয়ে হেঁটে যেতে পারে-এ ধরনের একাধিক স্থানে সংযোগ সড়কহীন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে কার বা কাদের স্বার্থে? উন্নয়নের নামে মূলত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অসাধু কিছু কর্মকর্তার পকেট ভারী করার জন্যই সেতু নির্মাণের এমন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এমনও দেখা গেছে, মরা খাল ও খাড়ির উপর নির্মিত সেতুগুলো আসলে কালভার্ট; কিন্তু এগুলোকে সেতু হিসাবে দেখিয়ে দ্বিগুণ বরাদ্দ পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় তদন্তের দাবি রাখে।
যে কোনো সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে তা জনগণের কতটা উপকারে আসবে এবং সার্বিক উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। এটা অজানা নয়, সব সরকারের আমলেই একশ্রেণির কর্মকর্তা ঘাপটি মেরে থাকে বিভিন্ন প্রকল্প বের করে কমিশন আদায় করার জন্য। এরাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে পার পেয়ে যাওয়ায় এসব কর্মকাণ্ডে তাদের উৎসাহে ভাটা পড়ে না। আমরা মনে করি-সেতু, কালভার্ট ও সড়ক উন্নয়নের যে কোনো প্রকল্প পাশ করানোর আগে সেটা কতটা জনকল্যাণে আসবে তা নিরূপণ করা জরুরি। একই সঙ্গে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতাও যাচাই করা দরকার। দ্বিতীয়ত, প্রকল্প পাশ হওয়ার পর তা নিয়মমাফিক নির্মিত হচ্ছে কিনা, তা-ও দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।