জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়
জনস্বার্থ বিবেচনায় রাখতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
মানুষের জীবনযাপনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই জ্বালানি তেলের দামের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে, সেগুলোর দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের শর্ত পূরণে ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন ফর্মুলায় জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিশ্ববাজারের জ্বালানি তেলের মূল্যের সঙ্গে দেশের বাজার সমন্বয় করতে একটি কাঠামো তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। তিন মাস অন্তর পর্যালোচনা করে নতুনভাবে জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করা হবে। বিগত সময় দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি থাকলেও সরকার ভর্তুকি দিয়ে দেশের বাজারে তেল বিক্রি করেছে। আবার ২০১৯-২০২০ সালে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমলেও দেশের বাজারে খুব একটা কমেনি।
কাজেই আগামী দিনে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশের জনগণ যেন এর সুফল পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার নতুন যে কৌশলের কথা বলছে, প্রকৃত অর্থে এটি একেবারে নতুন কিছু নয়। অনেক দেশেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে কিছুদিন পরপর জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের নিয়ম চালু আছে। আমদানি করা জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে সারা বিশ্বে বেশকিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কোনো কোনো দেশে প্রতিদিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ বাজারে এর দাম সমন্বয় করা হয়।
সরকার জ্বালানি তেলের বিষয়ে বর্তমান সিদ্ধান্তটি এমন সময়ে নিয়েছে, যখন দেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত তীব্র মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে যদি সরকার কয়েক মাস পর জ্বালানি তেলের মূল্য মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি করে, তাহলে দেশের বহু মানুষ বিপাকে পড়বে। এতে কৃষি ও শিল্প উৎপাদনসহ জনজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হবে, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সে অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের যা যা করার সুযোগ রয়েছে, তার সবই করতে হবে। তা না হলে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে দরিদ্র মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
বহু দেশেই বেশির ভাগ গণপরিবহণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চলে। ফলে সেসব দেশের মানুষের জীবনযাপনে জ্বালানির তেলের দাম হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব খুব একটা পড়ে না। বাংলাদেশের গণপরিবহণে বেসরকারি খাতের প্রাধান্য রয়েছে। এ কারণে জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব খুব দ্রুত অনুভব করে দেশের মানুষ।
বিশেষত জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহণ খাতে ব্যয় বেড়ে যায়। এই সুযোগে কোনো কোনো অসাধু পরিবহণ ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়; যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে দেশের কৃষি খাতেও। কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে সেচ লাগছে বেশি।
এ অবস্থায় ডিজেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হলে ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত খরচের কথা বিবেচনায় নিয়ে অনেক কৃষক জমির আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন। এতে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। কাজেই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকরের ফলে সারা দেশে এর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা বিবেচনায় নিয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।