চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা
সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। জানা গেছে, লবণের কারণে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে আসা পানি পান করা যাচ্ছে না। এমনকি রান্নাবান্নাও করতে পারছেন না অনেক এলাকার বাসিন্দারা। পান করার অযোগ্য পানি কেন সরবরাহ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা, এ প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া জরুরি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাইরের বোতলজাত পানি কিনে পান করতে গিয়ে গ্রাহকরা একদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে তারা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। কর্তৃপক্ষের দাবি, কাপ্তাই লেকের পানি কমে যাওয়ার কারণে সাগরের পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদা নদীতে ঢুকে পড়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।
আশ্চর্যজনক হলো, হালদায় অবস্থিত চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘মোহরা’ ও ‘শেখ রাসেল’ পানি শোধনাগারের মাধ্যমে নগরীতে পানি সরবরাহ করার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে পানি থেকে লবণ আলাদা করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে শুধু নদীর পানি জীবাণুমুক্ত করে সরবরাহ করা হয়। লবণাক্ততা এখনো সহনীয় মাত্রায় আছে দাবি করে ডিপ টিউবওয়েলের পানির সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে লবণাক্ততা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
তবে তাদের এ বক্তব্য মানতে নারাজ গ্রাহকরা। লবণাক্ততাজনিত সমস্যা সমাধানের দাবিতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ের পাশে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ থেকেই বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা শোচনীয় আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ কাম্য।
পানিজনিত সমস্যার স্বরূপ যাই হোক না কেন, এটি পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি সাক্ষ্য বহন করে। বস্তুত এ সমস্যা আজ বিশ্বব্যাপী। নাসার মতে, পৃথিবীর ৩৭টি বৃহৎ পানির স্তরের মধ্যে ২১টির পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। নাসা ১৩টি পানির স্তরকে আখ্যায়িত করেছে চরম সংকটাপন্ন হিসাবে, যেগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। এ স্তরগুলো ব্যবহার উপযোগী করা অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপায়ে স্তরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
পানির স্তর নিচে নামার বিপদ থেকে নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশও মুক্ত নয়। কেবল চট্টগ্রাম অঞ্চল নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা ভূগর্ভে পানির প্রবেশ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি জলাধার ও জলাশয়ের পরিমাণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সরবরাহ বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার লাগসই প্রযুক্তির উন্নয়নে জোর দিতে হবে।