একের পর এক অগ্নিকাণ্ড
দোষারোপের রাজনীতিতে প্রতিকার মিলবে না
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটসহ দেশের বেশ কয়েকটি মার্কেটে পরপর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। ‘কারণ’ জানা গেলে তবেই নেওয়া সম্ভব প্রতিকারের ব্যবস্থা। তাই এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীর জীবিকা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি,
এসব অগ্নিকাণ্ড নিয়ে দেশে এক ধরনের রাজনীতি শুরু হয়েছে। বড় দুটি দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এসব অগ্নিকাণ্ডের জন্য পরস্পরকে দায়ী করে বক্তব্য প্রদান করছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত। কারণ এতে তদন্ত ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আইনের প্রয়োগ নিরপেক্ষভাবে না হলে তদন্ত প্রভাবিত হয় এবং ঘটনার প্রকৃত কারণ থেকে যায় আড়ালে। তাই এ বিষয়ে দোষারোপের রাজনীতি থেকে রাজনৈতিক নেতাদের বিরত থাকা উচিত বলে মনে করি আমরা।
বস্তুত একের পর এক মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এক্ষেত্রে যদি সত্যিই নাশকতার বিষয় থেকে থাকে, তাহলে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তদন্ত ও প্রমাণের আগে কারও ওপর দায় চাপানোর সুযোগ নেই। আর অগ্নিকাণ্ডের কারণ যদি কারও গাফিলতি হয়ে থাকে, তাহলে তাকেও চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজধানীর ৫৮টি বিপণিবিতান পরিদর্শন করে তারা দেখতে পান সবকটিই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে নয়টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ। ইতঃপূর্বে অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ ঢাকার ১ হাজার ৪৮টি বিপণিবিতানকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল, যার মধ্যে ৪২৮টি ছিল অতি ঝুঁকিপূর্ণ। অগ্নিকাণ্ডের শিকার বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটও ছিল অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়। কাজেই ধারণা করা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও মার্কেটগুলো চালু রাখা অথবা সেগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত না করার পেছনে মার্কেট পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের গাফিলতি অথবা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্য কাজ করেছে। মার্কেটের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব বিষয়েও দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
আবার মার্কেটগুলোয় অগ্নিকাণ্ডের জন্য যদি নাশকতা দায়ী হয়ে থাকে, তাহলে সব ক্ষেত্রেই যে এর পেছনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কাজ করেছে, এমনটি নাও হতে পারে। হতে পারে নাশকতার পেছনে কাজ করেছে আর্থিক স্বার্থসংশ্লিষ্টতা। জানা যায়, বঙ্গবাজার ঘিরে রয়েছে নানামুখী স্বার্থ। এ জমিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বহুতল মার্কেট নির্মাণ করতে চায়। দুটি সংস্থা তাদের নামে পুরো জায়গাটি বরাদ্দ পেতে অনেকদিন ধরেই তৎপর।
ব্যবসায়ী নেতারা চাইতেন মার্কেটটি যেভাবে নিজেদের কবজায় আছে, সেভাবেই থাকুক। বঙ্গবাজার এই বহুমুখী দ্বন্দ্বের শিকার কি না, সে বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার। অগ্নিকাণ্ডের শিকার প্রতিটি মার্কেটের ক্ষেত্রেই এ ধরনের আশঙ্কার দিকগুলো খতিয়ে দেখা উচিত। এর পরিবর্তে দোষারোপের রাজনীতি চলতে থাকলে সমস্যাটির কোনো সুরাহা হবে না। বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে সবাইকে।