Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবাজারের হাজার হাজার ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। দেশে কাপড়ের অন্যতম এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরপরই আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট। জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজারসহ আশপাশের আরও কয়েকটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঈদ সামনে রেখে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন। কয়েক ঘণ্টার অগ্নিকাণ্ডে তাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। অগ্নিকাণ্ডে যেসব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এর আগেও এ মার্কেটে একাধিকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বছর আগে বঙ্গবাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল; বহুবার নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে আরও কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সিদ্দিকবাজারে একটি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। গুলশানে বহুতল এক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নকশাবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। কাজেই কেউ যাতে নকশাবহির্র্ভূত ভবন নির্মাণ করতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

ভবন নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মানা এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকাই যথেষ্ট নয়। গুলশানের বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কসংকেত বেজে ওঠে; কিন্তু অনেকেই তা আমলে নেয়নি। এছাড়া যারা অ্যালার্ম শুনে ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে বের হয়েছিলেন, তাদের অনেকে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ব্যবহার করেননি। অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে আতঙ্কে ভবন থেকে নিচে ঝঁপিয়ে পড়ে দুজন মারা যান। কাজেই কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষ হতাহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর পুরান ঢাকার সব রাসায়নিক গুদাম এবং বিভিন্ন কারখানা সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো এখনো সরানো হয়নি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড এবং ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় স্পষ্ট হয়, অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ সম্পর্কে গতানুগতিক ভাবনা পরিহার করে আমাদের আরও সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের পর তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়েন তা হলো পানি সংকট। কাজেই সারা দেশের জলাধারগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে, সেহেতু সারা দেশের জলাধারগুলোয় শুষ্ক মৌসুমেও পর্যাপ্ত পানি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

অগ্নিকাণ্ড যেভাবেই ঘটুক, তা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। কাজেই এ ব্যাপারে প্রত্যেকেরই সতর্ক থাকা দরকার। অগ্নিকাণ্ড এড়াতে প্রথমেই যে বিষয়টির ওপর নজর দেওয়া প্রয়োজন তা হলো, ভবনে পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। ভবনে যেন বিপজ্জনকভাবে দাহ্য পদার্থ রাখা না হয়, কর্তৃপক্ষকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে হবে। ব্যাপক সচেতনতা ও সতর্কতা অগ্নিকাণ্ডের বড় ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম