প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব
ঋণের ছাড় পেতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রায় ৮ মাস আগে বিশ্বব্যাংক বোর্ড ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভারনাবিলিটি রিডাকশন প্রজেক্ট’ (রিভার)-এর অনুকূলে অন্যূন ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিলেও তা কোনো কাজে লাগাতে না পারার বিষয়টি দুঃখজনক। এর মূল কারণ নিয়মিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়া। উল্লেখ্য, চলমান সংকটের আগে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। তবে সংকট শুরুর পর একনেক বৈঠকও কমে যায়। শুরুতে দুই সপ্তাহে একটি করে বৈঠক হলেও বর্তমানে মাসে একটি করে একনেক বৈঠক হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে একনেক বৈঠক। বস্তুত নিয়মিত একনেক বৈঠক না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পে ঋণের ছাড় পেতে বিলম্ব হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
চলমান ডলার সংকট মোকাবিলায় বৈদেশিক অর্থ আছে-এমন প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া উচিত, তা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের এ সংক্রান্ত ঋণের সুদহার কম, শর্তগুলোও সহজ। অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের ৭৮টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় ৫০০টি বহুমুখী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, অ্যাক্সেস রাস্তা এবং জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও নৌঘাট তৈরি, সড়কে সৌরবাতি স্থাপন ও বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা হবে। স্বাভাবিক সময় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে ব্যবহার করা যাবে, যেখানে সৌরশক্তি ব্যবস্থা, পানি, স্যানিটেশনসহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সুবিধার পাশাপাশি নারী ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। বস্তুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নদী ও আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিম্নাঞ্চলীয় ব-দ্বীপ হওয়ায় বাংলাদেশ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। উদ্বেগের বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে বন্যার মাত্রা ও তীব্রতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন এ প্রকল্পটি তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা এবং সুরমা ও মেঘনা নদীর অববাহিকার অত্যন্ত বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোর জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সাহায্য করবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যথাসময়ে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে এর সুফল থেকে দেশ ও জাতি বঞ্চিত হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে জনগুরুত্বপূর্ণ ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভারনাবিলিটি রিডাকশন প্রজেক্ট’ (রিভার) শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।