উচ্চশিক্ষায় ভর্তিযুদ্ধ: মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
উচ্চমাধ্যমিকের ফল হাতে পাওয়ার পরপরই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মেধাবীরা। এর কারণ হলো, ভালো ফলধারী শিক্ষার্থীর তুলনায় মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সেগুলোর আসন সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। দেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার মতো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ। এর মধ্যে বুয়েট, মেডিকেল, বড় সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আসন সংখ্যা সাকুল্যে ৯০ হাজারের মতো।
অন্যদিকে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২। আর জিপিএ-৫-এর নিচে কিন্তু ৩.৫-এর উপরে শিক্ষার্থী আছেন ৬ লাখ ৬০ হাজার ২১০ জন। উল্লিখিত ৯০ হাজার আসনের জন্য মূলত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যেই লড়াই হবে। এ হিসাবে গড়ে প্রতি আসনের জন্য অন্তত ৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারেন। এ অবস্থায় কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই তাদের কাঙ্ক্ষিত আসনটি অর্জন করতে হবে, যা বলাই বাহুল্য।
এ কথা ঠিক, কোনো দেশেই উচ্চশিক্ষায় ভর্তির আসন সীমাহীন হয় না। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা সবার জন্যও নয়। যৌক্তিক কারণেই সমাজে সব ধরনের পেশার প্রয়োজন রয়েছে।
আমরা মনে করি, এসব বাস্তবতা মাথায় রেখেই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে পার্থক্যের কারণে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তি সংকটের কথাটি সাধারণভাবে মেনে নিলেও এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই-দেশে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
এমনকি দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মান নিশ্চিত করতে পারছে না। এ অবস্থায় যদি বাধ্যতামূলকভাবে বিভিন্ন প্রোগ্রামের স্বীকৃতির (অ্যাক্রেডিটেশন) ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে মানসম্মত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তাও অনেকটাই লাঘব হবে।
এবারের ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হলেও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অনেকেই কাঙ্ক্ষিত বা পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন না। এমনকি জিপিএ-৫ পেয়েও শুধু আসন সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির সুযোগ পাবেন না।
ধারণা করা হচ্ছে, এবার উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাওয়া লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ভালো মানের বা তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন না। অর্থাৎ ভালো ফলাফল করেও শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বস্তত দেশে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় প্রতিবছর গুটিকয় বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে থাকে।
এ অবস্থায় দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি ভালো ও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব ও ভর্তি সংকটের সুযোগে বেসরকারি ও বিদেশি নামধারী বিশ্ববিদ্যালগুলোর তথাকথিত শাখা বা ক্যাম্পাস গড়ে উঠতে দেখা যায়।
প্রাইভেট টিউশনি, কোচিং সেন্টার ইত্যাদির পর শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যধারায় সর্বশেষ যুক্ত হওয়া দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। এ অবস্থায় মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি অভিন্ন পদ্ধতিতে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।