নতুন শিক্ষাব্যবস্থা
প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও অর্থের সঠিক ব্যবহার
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলার জন্য দেশে বিশ্বমানের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, সরকার সেই লক্ষ্য অর্জনে যা যা করা দরকার, সবই করবে। প্রশ্ন হলো, যে শিক্ষকদের দিয়ে দেশে বিশ্বমানের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কাজটি সম্পন্ন করা হবে, তেমন দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আছেন কি?
সৃজনশীল পদ্ধতির প্রয়োগে গত এক যুগের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিলেই স্পষ্ট হয় বিদ্যমান শিক্ষকদের দিয়ে দেশে বিশ্বমানের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কাজটি কত কঠিন। কাজেই কাঙ্ক্ষিত সময়ে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের পাশাপাশি বিনিয়োগকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী প্রাথমিক বা মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে, এক যুগ পর তারা উন্নত দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যাতে এগিয়ে থাকতে পারে, তেমন সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিদ্যমান শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে অব্যাহত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকেইে শ্রেণিকক্ষের পাঠদানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। শ্রেণিকক্ষের পাঠদানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত, এ নিয়ে গবেষণা দরকার। এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের পাঠদানে রোবটের ব্যবহার শুরু করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তির প্রায়োগিক দিক এবং বিদেশি ভাষার গুরুত্বপূর্ণ দিকসহ বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে।
দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রতিটি ক্লাসে পাঠদানের সঙ্গে রোবটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে দেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তারাই প্রয়োজনীয়সংখ্যক রোবট তৈরি করতে সক্ষম হবেন।
এ ধরনের প্রকল্পে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদালয়সহ ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকলে সংশ্লিষ্টরা নানাভাবে উপকৃত হবেন। বস্তুত এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির প্রায়োগিক দিকের সঙ্গে আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ পরিচিত হবে, যা জ্ঞাননির্ভর সমাজ নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আগামী দিনের প্রায় প্রতিটি পেশায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র ও মানুষ মিলেমিশে কাজ করবে। সেই পরিবেশের উপযোগী জনশক্তি গড়ে তুলতে না পারলে আমরা প্রতিযোগী দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ব। বহুদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষাদানের কথা বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মডেলটা কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ক গবেষণায় দেশের প্রকৃত গুণিজনদের সম্পৃক্ত করতে হবে। মানবশিশু অসাধারণ কল্পনাশক্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাদের সেই কল্পনাশক্তিকে বিকশিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে দেশে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে। এজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
একসময় দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে একদিন ‘বিচিত্রা অনুষ্ঠান’ নামের একটি ক্লাস হতো। কোনো এক অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। যে কোনো ভালো উদ্যোগের ধারাবাহিকতা না থাকলে বিশ্বমানের নাগরিক তৈরির অঙ্গীকার কতটা বাস্তবে রূপ লাভ করবে, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।