হাইকোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ রায়
নারী অধিকার রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে ব্যবহৃত সব ফরম পূরণে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) পর্যায়ে বাবার নাম না দিয়ে মায়ের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণের সুযোগ নিয়ে ১৪ বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট মঙ্গলবার এ রায় দেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান ফরম পূরণে বাবা অথবা অভিভাবকের নাম উল্লেখ করার সুযোগ ছিল এতদিন। হাইকোর্টের এ রায় দেশে নারী অধিকার ও তাদের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি আমরা।
মানবসভ্যতাকে আজকের পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রে নারীর বিরাট অবদান রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য-মেধা আর শ্রমে, আত্মত্যাগ আর বাৎসল্যে এ সমাজের চাকা সচল রাখলেও নারীর জীবনধারায় মর্যাদা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র আমাদের প্রাত্যহিক অভ্যাসে প্রকাশ পায়। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। ১৯৭২ সালে নবগঠিত রাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে তদানীন্তন সরকার নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নারী অধিকার ও উন্নয়ন আন্দোলনের অংশীদার হিসাবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেছে, সমর্থন প্রদান করেছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকারহীনতাসহ নানা ক্ষেত্রে এ দেশের নারীদের বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিষয়টি কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের পথে বাধা হিসাবেও কাজ করছে। এতে জাতীয় উন্নয়নের সমন্বিত প্রচেষ্টাও বিলম্বিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, এমন পরিস্থিতি দেশে নারীদের সামগ্রিক গতিশীলতার পথে একটি স্থায়ী বাধা, যা উন্নয়ন ও মূল কর্মধারার সঙ্গে নারীদের সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্র সংকুচিত করছে। এটি আজ ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে, নারীর অধিকার, তার সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা গেলে তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রসারে অবদান রাখে। হাইকোর্ট প্রদত্ত রায়ের আলোকে দেশে নারী অধিকার রক্ষায় সবাই সচেষ্ট হবেন, এটাই প্রত্যাশা।