চার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ: অনিয়ম রোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাময়িক সনদ নিয়ে পরিচালনার অনুমোদন পাওয়া দেশের ১৮ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত বৃহস্পতিবার জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করলেই কেবল শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি পাওয়া যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে-প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি। পাশাপাশি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়-স্টেট ইউনিভার্সিটি ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। এছাড়া বাকি ১২ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩ থেকে ৬ মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১২ বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রম শুরুর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনের ১২(১) ধারা অনুযায়ী ইউজিসি উপরোক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে।
অতীতে সরকারের পক্ষ থেকে অনেকবার দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটা নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এ ব্যাপারে ইউজিসির কার্যকর কোনো ভূমিকাও চোখে পড়েনি। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। অলাভজনক ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও কৌশলে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওজি) বা মালিকপক্ষ অনেকটা পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের মতো এগুলো চালাচ্ছে।
উচ্চশিক্ষার নামে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি, অনিয়ম, ভর্তি ও সনদবাণিজ্য করলেও এসব নিয়ে সরকার ও ইউজিসির তৎপরতা ছিল অনেকটাই শিথিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি থেকে মাঝেমধ্যে দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করে পত্র দেওয়া হলেও বস্তুত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর এতদিন সরকারের শক্ত কোনো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এ কারণে মালিকানা দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে নামকাওয়াস্তে পাঠদান, কোচিং সেন্টারের আদলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, ভাড়ায় শিক্ষক এনে জোড়াতালির ক্যাম্পাস পরিচালনা, সনদ বিক্রি, ক্যাম্পাস ও শাখা বিক্রিসহ নানারকম অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
উচ্চশিক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহকে পুঁজি করে একশ্রেণির শিক্ষা-বেনিয়া ফাঁদ পেতে বসেছে। এর মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের প্রতারিত করার পাশাপাশি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দুঃখজনক হলো, এদের নানাভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির অসাধু সদস্য, আইনজীবী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সুশীল সমাজের কিছু প্রভাবশালী প্রতিনিধি ও রাজনীতিকও এর সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
মূলত শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রতারণার ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো, রাজধানীর বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় অভিভাবক ছাড়াই চলছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়াচ্ছেন, কী পড়ানো হচ্ছে-তার খোঁজ রাখে না কেউ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি থেকে মাঝেমধ্যে দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করে পত্র দেওয়া হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা দূর করার পাশাপাশি স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে দেশের প্রচলিত আইন ও নিয়ম মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বাধ্য হয়, সে জন্য সরকার অনমনীয় মনোভাবের পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।