গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সদস্য হলে অল্প সময়ে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া যায়, কোনো কোনো প্রভাবশালীকেও ম্যানেজ করা যায়।

এমন ধারণা থেকেই কেউ কেউ গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের এক সদস্যকে সহায়তা করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্য।

জানা যায়, আদালতে নিলামের কারসাজি করে কৌশলে গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরাই তা কিনে নিতেন। এমন ঘটনা নতুন নয়।

এ ধরনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ‘ভুল’ করে কীভাবে সহায়তা করেছেন, তাও বহুল আলেচিত। এমন অপরাধে যুক্ত থাকায় কোনো কোনো ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার দৃষ্টান্তও রয়েছে। এরপরও গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের তৎপরতা কমছে না কেন? চুরি যাওয়া যানবাহন উদ্ধার করে সেগুলো মালিককে বুঝিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আমরা স্বস্তি পাই। এর বিপরীত চিত্রটি হলো, সিন্ডিকেটের সদস্যরা গাড়ি চুরি করার পর মালিককে খুঁজে বের করে অর্থের বিনিময়ে তা ফেরত দিতে ‘চুক্তি’ করতে চায়। চোরদের এতটা বেপরোয়া হওয়ার সাহস জোগায় কে? গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের বেপরোয়া আচরণ অব্যাহত থাকলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যাবে।

উদ্বেগজনক হলো, এক্ষেত্রে সুফল মিলছে না ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগিয়েও। শুধু স্টিলের শিটে ডিজিটাল নম্বর খোদাই এবং গাড়ির গ্লাসে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) স্টিকার লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। উল্লেখ্য, গাড়ির নিরাপত্তা, পরিবহণব্যবস্থার আধুনিকায়ন, অপরাধ দমন এবং গ্রাহকসেবার মান বাড়াতে প্রায় এক যুগ আগে ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় বিআরটিএ। গাড়ির মালিকদের অভিযোগ, এ প্রকল্প থেকে অর্থ ও সময়ের অপচয় ছাড়া আর কোনো সুফলই মেলেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা, জবাবদিহি এবং দক্ষ জনবল না থাকলে এ ধরনের প্রকল্প থেকে সুফল পাওয়া যাবে না। প্রশ্ন হলো, সময়োপযোগী এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না কেন? বস্তুত সর্বক্ষেত্রেই কিছু ব্যক্তির দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণে দুর্নীতির পথ খোলা থেকে যায়। দুর্নীতি রোধ করার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া সম্ভব। আমরা আশা করি, গাড়ি চুরি রোধে এক্ষেত্রে বিদ্যমান ফাঁক-ফোকরগুলো বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং এ খাতের অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।