দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটে যাত্রী হ্রাস
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে পর্যটন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নয়নের সমান্তরালে সংকট ও হতাশার একটি চিত্র প্রকাশিত হয়েছে গতকালের যুগান্তরে। পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৬ মাসের ব্যবধানে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটগুলোয় চলা বেসরকারি লঞ্চের ট্রিপ সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এর বাইরে যেসব রুট সচল রয়েছে, সেগুলোয়ও যাত্রীর অভাবে রোটেশন পদ্ধতিতে লঞ্চ চলছে। এসব কারণে লঞ্চ মালিকদের আয় তো কমেছেই; উপরন্তু আয় কমেছে সরকারেরও।
দেখা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর আগের ৬ মাসের তুলনায় পরের ৫ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) ঢাকা নদীবন্দরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আয় কমেছে অন্তত পৌনে এক কোটি টাকা।
দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথ নিয়ে উদ্বেগ, হতাশা ও অনিশ্চয়তার সংবাদ প্রকাশের বিপরীতে একই দিন আশাজাগানিয়া একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে যুগান্তর। ‘গঙ্গা বিলাস’ নামে বিশ্বের দীর্ঘতম (শুধু নদীতে চলার ক্ষেত্রে) বিলাসবহুল প্রমোদতরি চালু করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, যেটি উত্তরপ্রদেশের বারানসি থেকে বাংলাদেশ হয়ে যাবে আসামের ডিব্রুগড়।
পাড়ি দেবে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার। উল্লেখ্য, বিশ্বে নদীপথে এটাই হবে দীর্ঘতম যাত্রা। পথে দুদেশের মোট ২৭টি নদী পাড়ি দেবে বেসরকারি এ প্রমোদতরি। এ সময় পর্যটকরা ভারত-বাংলাদেশের অন্তত ৫০টি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ প্রমোদতরি যেখান দিয়ে যাবে, সেখানকার বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থান, হবে উন্নয়ন। ভারতের এ উদাহরণ সামনে রেখে নৌপথে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে লঞ্চের অবকাঠামো পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় মেরামতে সরকার প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।
একসময় জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খরস্রোতা নদনদী ও খালবিল আমাদের জীবন-জীবিকা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে দখল ও দূষণের কারণে বর্তমানে অনেক নদনদী ও খালবিল জীর্ণশীর্ণ অথবা মরণাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। অনেক নদী ও খালবিল ইতোমধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়েও গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করে নৌপথে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটানো গেলে লঞ্চ মালিকসহ এ খাতে কর্মরতরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।