বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাদের শ্রদ্ধা ও স্মরণ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পথিকৃৎ শিল্পোদ্যোক্তা
জসিম উদ্দিন
শূন্য থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতির কাতারে উঠে এসেছিলেন দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের একজন। বাংলাদেশে শিল্পায়নের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। গড়ে তুলেছেন এক এক করে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে অর্থনীতিতে তার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
নুরুল ইসলাম ছিলেন একজন সাহসী শিল্পোদ্যোক্তা। তিনি অনেক সাহস নিয়ে নিত্যনতুন এবং বড় ধরনের শিল্প গড়ে তুলেছেন। এগুলোকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তুলেছেন। একটি শিল্পকে দাঁড় করানোর পেছনে তার ছিল কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা। অনেক প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে গেছেন। তিনি নতুন শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন।
দেশের অর্থনীতিতে, বিশেষ করে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নুরুল ইসলামের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় লক্ষাধিক মানুষ কর্মরত রয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাইভেট সেক্টরের যে অবদান, তাতে যমুনা গ্রুপ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সর্বোপরি নুরুল ইসলাম ছিলেন একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা।
জসিম উদ্দিন : সভাপতি, এফবিসিসিআই
আধুনিক মননের সাহসী উদ্যোক্তা
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ
বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের প্রায়ত চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সাবেক সহসভাপতি নুরুল ইসলামের আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটিতে আমি আমার নিজের, বিসিআই পরিচালনামণ্ডলী এবং সদস্যদের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি। যমুনা গ্রুপ দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প ও সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে তিনি ছিলেন একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। বর্তমানে লক্ষাধিক মানুষ যমুনা গ্রুপে কাজ করছে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। ইলেকট্রনিক্স, বস্ত্র, ওভেন, গার্মেন্টস, নির্মাণ ও আবাসন খাতের ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ। এছাড়া দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। নুরুল ইসলাম নীতির প্রতি ছিলেন একনিষ্ঠ। শুধু শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রেই নয়, সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির সব জায়গায় তিনি ছিলেন দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেশের শিল্প ও সেবা খাতে যে অসামান্য অবদান তিনি রেখে গেছেন, সেজন্য আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ : সভাপতি, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ
এখনো তার অভাব অনুভব করি
মোহাম্মদ আলী খোকন
দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ‘জন্মিলে মরিতে হইবে’, এটি চিরন্তন সত্য মেনেই বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের একজন সক্রিয় সদস্য হিসাবে আমি তার অবদান ও ব্যক্তিগত সান্নিধ্যকে শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করছি। আমার নিজের ও পরিচালনা পর্ষদসহ সব সদস্যের পক্ষ থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এখনো তার অভাব অনুভব করি। তিনি ছিলেন টেক্সটাইল শিল্পের অভিভাবকতুল্য। যে কোনো সমস্যা নিয়ে তার কাছে গেলে সাহসের সঙ্গে সমাধানের পথ দেখিয়ে দিতেন। তার হাতেগড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তার পুত্র-কন্যা ও স্ত্রীর দক্ষ নির্দেশনায় সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। নুরুল ইসলামের ব্যক্তিত্ব আমাদের জন্য অনুকরণীয়। যমুনা গ্রুপে এক লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের অন্য শিল্পোদ্যোক্তাদেরও অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি মনে করি। নুরুল ইসলাম দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে তার মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে ৪১টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আমার জানামতে, দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পের কোনো বিকল্প নেই-এ ধারণার ভিত্তিতে তিনি অনেক ঝুঁকির মধ্যেও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলেন।
মোহাম্মদ আলী খোকন : সভাপতি, বিটিএমএ
দেশপ্রেম ছিল তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য
মোহাম্মদ হাতেম
দেশের বস্ত্রশিল্পসহ পুরো শিল্প খাতে নুরুল ইসলামের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নিজের দূরদর্শিতায় অনেকগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যে কারণে আজ হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তার মৃত্যুতে আমরা একজন বহুমাত্রিক শিল্পোদ্যোক্তাকে হারিয়েছি। দেশে যমুনা গ্রুপ একটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী। ১৯৭৪ সালে নুরুল ইসলাম যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প ও সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা ছিলেন। বর্তমানে লক্ষাধিক মানুষ কাজ করছেন যমুনা গ্রুপে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। ইলেকট্রনিক্স, বস্ত্র, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ, টয়লেট্রিজ, নির্মাণ ও আবাসন খাতে ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ। এছাড়া দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। বস্ত্র খাতের যে কোনো সংকটে তিনি আমাকে স্মরণ করতেন। সঙ্গে রাখতেন গিভেন্সী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল ভাইকে। দেশপ্রেম ছিল নুরুল ইসলাম ভাইয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি একজন ভিশনারি উদ্যোক্তা ছিলেন বলেই এটি করতে পেরেছেন। আজ তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
মোহাম্মদ হাতেম : নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের আইকন ছিলেন
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিতু
নুরুল ইসলাম ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের আইকন ছিলেন। তাকে দেখে অনেকে শিল্পে আগ্রহী হয়েছেন। তার অবদান অনস্বীকার্য। কারণ জাতীয় অর্থনীতিতে তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। সত্যি বলতে, একসময় আমরা আশা করছিলাম এ দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নেতৃত্ব দেবেন নুরুল ইসলাম। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি পদে আসবেন। কিন্তু তার অকালমৃত্যুতে এটি হয়ে ওঠেনি। এখানে একটি শূন্যতা রয়ে গেল। তিনি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো যমুনা গ্রুপ আরও সম্প্রসারিত হতো। সেখানে আরও হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো। শুধু তাই নয়, তার দূরদর্শী চিন্তাভাবনার ইতিবাচক প্রভাব পড়ত দেশের অর্থনীতিতে। তার প্রতিষ্ঠিত দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন দেখে মনে হয় একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তিনি এ দুটি মিডিয়া পরিচালনা করেছেন। এর মাধ্যমে জনগণের কথা তুলে নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি দেশের কল্যাণে কাজ করছে। অনেক শিল্পপতির টাকা আছে, কিন্তু যমুনা ফিউচার পার্কের মতো কর্মকাণ্ডের সাহস নেই। আমি অনেক দেশ ঘুরেছি। খুব কম দেশেই এ ধরনের শপিংমল দেখা যায়। বিভিন্ন দেশের শপিংমল দেখার পর মনে হয়েছে তিনি কীভাবে এই চিন্তা, প্রযুক্তি, পরিকল্পনা এ দেশে নিয়ে এলেন! এটি প্রায়ই আমাকে ভাবিয়ে তোলে। এটি আমার দেশের জন্য গৌরব। বর্তমানে তার ৪১টি প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক মানুষ কাজ করছে। দেশের বিনিয়োগ খাতে অনেক অবদান রয়েছে তার।
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিতু : সভাপতি, বিএমবিএ
দূরদর্শী উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি
নাসির উদ্দিন
যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম একজন বহুমাত্রিক শিল্পোদ্যোক্তা ছিলেন। তার মাধ্যমে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। শুধু তাই নয়, মিডিয়া জগতেও তিনি পদচারণা করেছেন। দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি দূরদর্শী উদ্যোক্তা ছিলেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা এবং মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে।
নুরুল ইসলাম দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের মাধ্যমে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। দুটি মিডিয়া সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রয়েছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই তার সমর্থন ছিল। না হলে মিডিয়া দুটি এভাবে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে পারত না। পাশাপাশি তিনি সব সময় সমাজের ভালো দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। যে কারণে ঝুঁকি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক গড়ে তুলেছেন। সত্যি বলতে, বড় মনের অধিকারী না হলে এত বড় কাজ করা সম্ভব হতো না। ভিশনারি উদ্যোক্তা ছিলেন বলেই তিনি এটি করতে পেরেছিলেন।
নুরুল ইসলাম দেশের শিল্প ও সেবা খাতে যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, সেজন্য তিনি আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
নাসির উদ্দিন : সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিজিএমইএ