দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব নুরুল ইসলাম ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আমজাদ হোসেন এবং মাতা জোমিলা খাতুন। জনাব নুরুল ইসলাম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ২০২০-এর ১৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। আমি গভীর কৃতজ্ঞতাভরে কর্মবীর ও উদ্যমী এ মানুষটিকে স্মরণ করি।

তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দেশের আর্থিক বিকাশে তার আরও অনেক কিছুই দেওয়ার ছিল। কিন্তু মরণঘাতী করোনাভাইরাস তাকে চিরতরে থামিয়ে দিয়েছিল। মৃত্যুর পর তার কফিন মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রিয় মাতৃভূমির লাল-সবুজের পতাকা দিয়ে। যে পতাকা অর্জনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে জীবন-যৌবন বাজি রেখে হাতিয়ার তুলে নিয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশ নিয়েছিলেন। বীর এই মুক্তিযোদ্ধাকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে তার শেষকৃত্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে তাকে চিরবিদায় জানিয়ে সমাহিত করা হয়েছিল। আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।

জনাব নুরুল ইসলাম ছিলেন একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা। সারা জীবনের যা কিছু উপার্জন তা দেশেই বিনিয়োগ করেছেন এবং কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব দূরীকরণে অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন তথা শিল্পায়নের তিনি অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। জনাব নুরুল ইসলাম এক এক করে বহু শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

১৯৭৪-এ তিনি যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি অসামান্য মেধা, শ্রম, দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে ধাপে ধাপে বস্ত্র, ইলেকট্রনিক, পোশাকশিল্প, রাসায়নিক, চামড়া, পানীয়, টয়লেট্রিজ, মোটরসাইকেল এবং আবাসন খাতসহ গড়ে তোলেন ৪১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা টেলিভিশন এবং দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা। দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ করে মানুষের কর্মসংস্থানে নুরুল ইসলামের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লক্ষাধিক মানুষ কর্মরত রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাইভেট সেক্টরের যে ভূমিকা তাতে যমুনা গ্রুপ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু তার অকাল প্রয়াণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে আমি বিশ্বাস করি তার সুযোগ্য উত্তরাধিকাররা সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারবে এবং সেটাই কাম্য।

একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা হয়েও তাকে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর এর সব কিছুকেই হাসিমুখে বরণ করে তিনি সাফল্যের সঙ্গে জীবনের পথ তৈরি করে এগিয়ে গেছেন। সদাহাস্যোজ্জ্বল, কর্মীবান্ধব, বিনম্র এ মানুষটির সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না, ভাবতেই মন খারাপ হয়। আমাদের সবাইকেই একদিন না একদিন বিদায় নিতে হবে। কিন্তু এভাবে এমন দুঃসময়ে তার এ মহাপ্রস্থান ছিল সবার জন্য বিশেষ করে আমার জন্য গভীর বেদনার। আমি মনে করি, তার কর্মই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও তিন কন্যা রেখে গেছেন। সফল শিল্পোদ্যোক্তা নুরুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার পরিবারের শোকসন্তপ্ত সব সদস্যের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা ও পরম করুণাময়ের কাছে আকুল প্রার্থনা তিনি যেন তাকে বেহেশতবাসী করেন।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ-সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ