বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত
মায়ের কাছে হাফেজের শেষ আবদার ‘মহররমের দুইটা রোজা থাইকো’
রোজা অবস্থায় শহিদ

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর আবদুল্লাহপুর উত্তরা জামি’আ দ্বীনিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন ২১ বছর বয়সি হাফেজ সাদিকুর রহমান সাদিক। কিতাবখানায় পড়ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সহপাঠীদের সঙ্গে মহররমের রোজা রেখে আন্দোলনে নেমে পড়েন উত্তরার সড়কে। পুলিশের ছোড়া গুলি সাদিকের পিঠ ভেদ করে পেট দিয়ে বের হয়। সেখানেই শহিদ হন তিনি। আগেরদিন রাতে মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। মাকে বলেছিলেন, ‘মহররমের দুইটা রোজা থাইকো।’ ছেলের শহিদ হওয়ার এমন বর্ণনা পাওয়া যায় অশ্রুসিক্ত শাহনাজ বেগমের কাছ থেকে।
হাফেজ সাদিকের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ফুলমালির চালা করিমগঞ্জ ঘোনাপাড়া গ্রামে। তার বাবা কুয়েত প্রবাসী লুৎফর রহমান। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। সরেজমিন শুক্রবার সাদিকের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় মা শাহনাজের সঙ্গে। যুগান্তরকে তিনি বলেন, সাদিক সেদিন জুমার নামাজ শেষ করে সহপাঠীদের সঙ্গে রাজপথে মিছিলে যোগ দেয়। গুলি লাগার ভিডিওটা আমাদের কাছে পাঠানো হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলি পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। গুলি লাগার দেড়-দুই ঘণ্টা পরে সে মারা যায়। সাদিকের স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যতে মাওলানা হওয়ার। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে তার স্বপ্নভঙ্গ হয় বুলেটে বিদ্ধ হয়ে।
চাচা মাসুদ মিয়া বলেন, ১৯ জুলাই ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক রূপ ধারণ করে। এ সময় পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে সাদিক শহিদ হয়। সেদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটা গুলিবিদ্ধ লাশের আত্মীয়স্বজন না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে আব্দুল্লাহপুর উত্তরা জামিআ দ্বীনিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসা সুপার এসে সাদিকের লাশ শনাক্ত করেন। পরে হাসপাতাল থেকে লাশ ঘাটাইল ফুলমালিরচালা ঘোনাপাড়া গোরস্থানে এনে দাফন করা হয়।
এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শাহনাজ বেগম বলেন, জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি।