ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
বেপরোয়া ডাকাত চক্র কুমিল্লার ১০ স্পটে

আবুল খায়ের, কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০টি স্পটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ডাকাত চক্র। হাইওয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত এসব স্পটে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এরই মাঝে ডাকাতি ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে মিয়ার বাজার হাইওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে ডাকাতির এসব ঘটনার দায় নিতে চাচ্ছে না হাইওয়ে ও থানা পুলিশ। দুটি ইউনিট একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার শহীদ নগর, ইলিয়টগঞ্জ, পুটিয়া, গোমতা, মাধাইয়া, চান্দিনা, সদর দক্ষিণের জোর কানন, চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজার, ফাল্গুনকরা, মিশ্বানি এলাকায় প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে এসব পয়েন্টে ডাকাত চক্রের রাজত্ব কায়েম করেছে। গেল এক মাসে এসব স্পটে ১০-১২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডাকাতির অধিকাংশ ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশের অসহযোগিতার কারণে মামলা কিংবা অভিযোগ দিতে পারেনি ভুক্তভোগীরা। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা এবং বেঙ্গল থানা, হাইওয়ে থানায় দৌড়ঝাঁপ করে মামলা করতে পারে না তারা। এতে বিচার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার ছাড়াই বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছে ভুক্তভোগীরা। ১৫ জানুয়ারি মহাসড়কের মিশ্বানী এলাকায় ৩০০ বস্তা চাল ভর্তি ট্রাক পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ৮ ফেব্রুয়ারি মহাসড়কের পাশে অবস্থিত মিয়া বাজার মসজিদ মার্কেটে প্রীতি জুয়েলার্স নামে স্বর্ণ দোকানে ডাকাতি হয়েছে। এসময় ডাকাত দল গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। লুট করে ৩৫ ভরি স্বর্ণ। ডাকাতদের গুলিতে আহত হন মোশারফ নামে এক ব্যবসায়ী। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ফাল্গুনকরা মাজার নামক স্থানে কুয়েত প্রবাসী নাইমুল ইসলামের বহন করা মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ১ মার্চ একই জায়গায় মালয়েশিয়া প্রবাসী বেলাল হোসেনের প্রাইভেটকারে ডাকাতি হয়। এসব ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগে ওসি মো. জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কুমিল্লার মাইক্রোবাস চালক শাহিন আলম বলেন, প্রতি রাতেই মহাসড়কের ১০টি হটস্পটে ডাকাত চক্র ওঁৎ পেতে থাকে। রড মেরে এবং গাড়ি চাপা দিয়ে চলন্ত ছোট যানবাহনগুলোর গতিরোধ করে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়। ডাকাতদের টার্গেট থাকে বিদেশ ফেরত যাত্রীবাহী গাড়িগুলো।
চান্দিনার প্রাইভেটকার চালক হুমায়ুন কবির বলেন, ডাকাতির শিকার অধিকাংশ ভুক্তভোগী বিচার পায় না। পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে উল্টো নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়। এতে মামলা কিংবা অভিযোগ না করেই তারা চলে যায়।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ফাল্গুনকরা এলাকায় ডাকাতির শিকার কুয়েত প্রবাসী নাইমুল ইসলাম বলেন, একটি পিকআপ দিয়ে চাপ দিয়ে আমাদের প্রাইভেটকারটির গতিরোধ করা হয়। চৌদ্দগ্রাম থানার ঠিক ৫০০ গজ দূরে আমার সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়। আমি থানায় মামলা করতে গেলে তারা বলে হাইওয়ে পুলিশের কাছে যেতে। আবার হাইওয়ে পুলিশের কাছে গেলে তারা লোকাল থানায় মামলা করতে বলেন। পুলিশের দুটি ইউনিটের ধাক্কাধাক্কিতে আমি মামলা করতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় আমরা বিব্রত। তবে আমরা বসে নেই। এসব ঘটনার ক্লু উদঘাটনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মিয়ারবাজার হাইওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যেসব স্থানে ডাকাতি হচ্ছে ওইসব এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে। ডাকাতি প্রতিরোধ করতে না পারলে এবং দায়িত্বে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।