Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তা

বঞ্চিতদের আবেদনের সময় বাড়ল ৪ মাস

Icon

আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত সাত মাসেও যাচাই-বাছাই হয়নি প্রশাসন ছাড়া অন্য ক্যাডারের (আদার্স) বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন। দুই দফা সময় বাড়িয়ে আবেদন নেওয়া হলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এ সংক্রান্ত কমিটি। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নতুন করে আরও চার মাস সময় বাড়িয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এই সময় বাড়ানো হয়। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা সরকার এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টিকে তারা সুস্পষ্ট বৈষম্য বলে মনে করছেন।

জানতে চাইলে বর্তমান শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আবেদন অনেক কম পড়েছে। যে কারণে দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া যারা আবেদন করেছেন তাদের গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন, বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর), জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন, বিভাগীয় ও শৃঙ্খলাজনিত প্রতিবেদন এবং দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন চাওয়া হবে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) করতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়, ঠিক অনুরূপ তথ্য চাওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, তাদের এসিআর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নেই। ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় তাদের এসিআর সংরক্ষণ করে। দুদক থেকে মামলাসংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে তারপর যাচাই-বাছাইয়ে বসবে কমিটি। এ কারণে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় লাগবে এবং সময় বাড়ানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে হতাশা কিংবা ক্ষোভের কিছু নেই। সরকার তাদের প্রতিকার দিতে চায় বলেই কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কাজ করছে।

জানা গেছে, গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হয়ে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে অবসরে যাওয়া আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে। কমিটির সদস্য সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর রহমান। আদার্স ক্যাডারের তৃতীয় গ্রেড থেকে তদূর্ধ্ব পদবির কর্মকর্তাদের অর্থাৎ যাদের পদোন্নতির জন্য এসএসবি প্রয়োজন কেবল তাদের আবেদন বিবেচনা করবে এই কমিটি। বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এই কমিটির কাছে আবেদন করতে বলা হয়। এ পর্যন্ত ২৮৫টি আবেদন পড়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে ডাক্তার এবং পুলিশ ক্যাডারের আবেদন বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আবেদনের সঙ্গে ক্যাডারের ব্যাচভিত্তিক সরকারি কর্মকমিশনের মেধাতালিকা, দুর্নীতির মামলা চলমান আছে কি না এবং অতীতে দুর্নীতির মামলা হয়ে থাকলে তার সর্বশেষ অবস্থা কী? বিভাগীয় মামলা চলমান আছে কি না এবং অতীতে বিভাগীয় মামলায় দণ্ডিত হলে দণ্ডের প্রকৃতিসহ তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তার চাকরিকালীন এসিআরসহ পদোন্নতির বেঞ্চমার্ক এবং আবেদনকারী কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য কি না সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ আবেদন করতে বলা হয়েছে।

আবেদনের সঙ্গে যে গ্রেডে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি চান সেই গ্রেডে তার কনিষ্ঠ কর্মকর্তা কত তারিখে পদোন্নতি পেয়েছেন, কনিষ্ঠ কর্মকর্তার নাম, আইডি নম্বর, পদোন্নতিপ্রাপ্তির তারিখ, আবেদনকারীর মেধাক্রম এবং যে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা কর্তৃক সুপারসিটেড হয়েছেন তার মেধাক্রম উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া অবসরোত্তর ছুটির তারিখ এবং বঞ্চনার কারণ উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিন্ন সুরে যুগান্তরকে বলেন, যে তারিখে তাদের আবেদন করতে বলা হয়েছে, তার ঠিক কাছাকাছি সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হয়েছে। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে সুপারিশ এবং পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অথচ আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। এছাড়া আদার্স ক্যাডারের বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা পদোন্নতিযোগ্য কি না সে বিষয়ে ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ের মতামত বা প্রত্যয়নপত্র চাওয়া হয়েছে। তারা আরও বলছেন, বাস্তবতা হচ্ছে যে সময় তারা অবসরে গেছেন এবং বর্তমানে যারা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদে কর্মরত তারা কেউ কাউকে চেনেন না। কীভাবে চেনাজানা নেই এমন একজন কর্মকর্তার জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সুপারিশ করবেন? তাছাড়া জাকির আহমেদ খানের কমিটিতে আদার্স ক্যাডারের কোনো প্রতিনিধি নেই। আদার্স ক্যাডারের বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের দাবি তারা যেন নতুন করে কোনো ধরনের অবিচার এবং বৈষম্যের শিকার না হন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম