Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

জাতীয় নাগরিক কমিটির সংলাপ

আ.লীগের ক্ষমতার উৎস ছিল নতজানু পররাষ্ট্রনীতি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আ.লীগের ক্ষমতার উৎস ছিল নতজানু পররাষ্ট্রনীতি

ইস্কাটনের বিস অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত সংলাপে অতিথিরা -যুগান্তর

জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের ওপর নির্ভর ছিল শেখ হাসিনা। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কাঁধে ভর করে কায়েম করেছিলেন ফ্যাসিবাদ। ধ্বংস করছিলেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা বলছেন, শুধু নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ১৯৭২ সাল থেকে একটি দেশের সেবা দাস হিসাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু খুনিরা এখন সে দেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিস অডিটোরিয়ামে ‘গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি : নতুন দিগন্তের সন্ধান’ শীর্ষক সংলাপে তারা এসব কথা বলেন। সংলাপের প্রথম সেশনে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএসএম আলী আশরাফ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রমুখ। ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এই দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষই কর্মঠ। এমন দেশ পৃথিবীতে খুবই কম আছে। এত সুন্দর বাংলাদেশেও আমরা গত ১৫ বছর পররাষ্ট্রনীতি দেখিনি। এই সময়ে দেখলাম নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। এই নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কারণ এই নীতির কারণে ক্ষমতায় ছিলেন তারা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আজ নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ সামনে এসেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এবং নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ড. এএসএম আলী আশরাফ বলেন, একটা ভালো পররাষ্ট্রনীতির জন্য আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে হবে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত-সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে আর কখনোই নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠবে না। 

ড. মাহদি আমিন বলেন, দেশের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে-তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সেই দেশে কারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন। ক্ষমতাসীনরা যদি জনগণের ভোটাধিকার নষ্ট করে এবং অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় থাকে তাহলে তারা নতজানু পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে। গত ১৫ বছর বাংলাদেশের মাটিতে এমন নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আমরা দেখেছি। তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার উৎস ছিল নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। 

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ১৯৭২ সালে আমরা একটি দেশের কাছে ফরেন পলিসি বিক্রি করে দিয়েছিলাম। সেই জায়গা থেকে আজ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াতে পারিনি। একটি দেশের সেবা দাস হিসাবে কাজ করেছি। গত ১৫ বছর আমরা সেটারও নমুনা দেখেছি। খুনিরা সে দেশে বসে এখন আমাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।

‘দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পালাবদলে বাংলাদেশের অবস্থান’ শিরোনামে সংলাপের দ্বিতীয় সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখন মানারাত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রব, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ। 

শামা ওবায়েদ বলেন, শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের ওপর বেশি নির্ভর ছিল। তিনি চলে যাওয়ার পর নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশ আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা ইনভেস্ট করতে চায়। কিন্তু তারা অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে ভোটের মাধ্যমে কোন সরকার আসবে? পলিসি কী হবে? সেই পলিসিগুলো তারা দেখতে চায়। সেই পলিসির ওপর ভিত্তি করে তারা ইনভেস্ট করবে।

তিনি বলেন, ভারত আমাদের চারদিকে ঘিরে রেখেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। কারণ হাসিনা সেখানে বসে আছে। হাসিনা সেখানে বসে থেকে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক কথা বলছে।

ববি হাজ্জাজ বলেন, ১৫ বছরে ফরেন পলিসি আমরা দেখেছি। এই পলিসি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নতজানুনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের অনেক কিছু ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ বানানোর পরও আমাদের লড়াই শেষ হয়নি। ৫৩ বছর ধরে আমি আমার মুক্তির লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ’৭১ সালে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সেখানে যুদ্ধ হয়েছে কিন্তু মুক্তি হয়নি। ফলে দফায় দফায় ভিন্ন নামে, ভিন্ন ব্যানারে, ভিন্ন প্রজন্ম ব্যানারে লড়তে হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ৫৩ বছরে আমাদের কোনো সলিড ফরেন পলিসি ছিল না। রাষ্ট্র আকারে শক্তিশালী সত্তা হিসাবে গড়ার যে জায়গা সেখানে আমাদের কোনো ফরেন পলিসি ছিল না। জিয়াউর রহমানের সময়টা ছাড়া পুরো সময়টা হচ্ছে যে, উপকমিটি ভিত্তিক যে রাজনৈতিক কমিটি হয়, সে রকম একটা পলিসি ছিল। ফরেন পলিসি ক্রাইসিস আমাদের রাষ্ট্রের সংকট ও সমস্যা।

বাংলাদেশের ওপর কাউকে খবরদারি করতে দেওয়া হবে না : পররাষ্ট্রনীতিতে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা শীর্ষক সংলাপের তৃতীয় সেশনে বক্তব্যে রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান, মেজর জেনারেল (অব.) আবুল কালাম মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম প্রমুখ। দিনের শেষ সেশনে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার : আন্তর্জাতিক কূটনাীতিতে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা শীর্ষক সংলাপের বক্তব্যে রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর, দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ড. শহীদুল আলম, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি সেলের সদস্য এসএম সুজাউদ্দিন। 

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, চোখে চোখ রেখে ফাইট করার ইয়াং জেনারেশন আমাদের আছে। এই জেনারেশন জীবনের মায়া ত্যাগ করে এবং রক্ত ও লাশ উপেক্ষা করে একজন দানবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। সবাই আস্থা রাখতে পারেন-এই জেনারেশনের দিকে আর কেউ বাঁকা চোখে তাকাতে পারবে না। বাংলাদেশের ওপর কাউকে খবরদারি করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ভারতের প্রভুত্ব আমাদের নেতারা স্বীকার করে নিয়েছিল। এই নেতারা এমন ভাবে ভারতকে উপস্থাপন করত যেন তাদের আমরা প্রভু মনে করি। আমরা বলছে চাই আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। আমাদের দৃষ্টি অল্প কয়েকটা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা কারও প্রভুত্ব করতে চাই না।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম