সচিবালয় অভিমুখে লং মার্চ
ম্যাটস শিক্ষার্থীদের পুলিশের লাঠিপেটা আহত ১২০

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ম্যাটস শিক্ষার্থীরা রোববার শিক্ষা ভবন ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের লাঠিচার্জ -যুগান্তর
চার দফা দাবি আদায়ে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) সচিবালয় অভিমুখে লং মার্চ কর্মসূচিতে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে ১২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৩৭ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
অনতিবিলম্বে শূন্যপদে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিয়োগ, উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ চার দফা দাবিতে রোববার সকাল ১০টা থেকে শাহবাগে আন্দোলনে নামে ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে কর্মসূচি দেওয়ায় আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিনিধি হিসাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও ছাত্র প্রতিনিধি মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিনিধি হিসাবে কথা বলতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অনেকে ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগান থামানোর আহ্বান জানান সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। এরপর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন তুহিন ফারাবী।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাকে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পাঠিয়েছেন। তিনি (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) জানিয়েছেন, তিনি আপনাদের দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছেন। আগামীকালের (আজ) মধ্যে দশম গ্রেডে নিয়োগের সার্কুলার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একদিনের জন্য আপনারা ধৈর্য ধরবেন। আশা করি এবার আপনাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হবে না।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার এ প্রতিনিধি আরও বলেন, সড়ক ছেড়ে আপনাদের উঠে যেতে আমি বলব না। শুধু বলব, শাহবাগের এই মোড় রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা মেডিকেল, বিএসএমএমইউ, বারডেমসহ অসংখ্য হাসপাতালের রোগী এ মোড় দিয়ে যাতায়াত করেন। সুতরাং রোগীদের ভোগান্তির বিষয়টিও আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।
পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আহম্মদ উল্যাহ মানসুর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) যান। তবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরিবর্তে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. মো. সরোয়ার বারী ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
এদিকে, সচিবালয়ে বৈঠকে বসলেও দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। অনতিবিলম্বে শূন্যপদে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিয়োগ, উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ নানা দাবিতে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে তারা লং মার্চ শুরু করেন। এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাধা দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশকিছু শিক্ষার্থী আহত হন। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে লং মার্চ শুরু করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, আশ্বাসের নামে আবারও মুলা ঝুলানোর চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরা আজই ম্যাটস বৈষম্যের সুরাহা চাই, আর রাজপথে এসে আন্দোলন করতে চাই না। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আশ্বাসেও আমাদের ভরসা নেই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পরও কেন সচিবালয়ে দিকে যাচ্ছেন জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের শাহবাগে বসিয়ে রেখে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করলে হবে না। আমাদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সবার সামনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দাবি মানার ঘোষণা দিলেই আমরা ঘরে ফিরে যাব। মন্ত্রণালয়ে আলোচনার বিষয়ে রাত সাড়ে ৯টায় মুঠোফোনে ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আহম্মদ উল্যাহ মানসুর যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দাবি ছিল চারটি। এর মধ্যে দশম গ্রেডের পরিবর্তে এগারোতম গ্রেড দিয়ে দ্রুত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও কোর্স কারিকুলাম সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে আমাদের ভরসা নেই। আমরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান করব।