চট্টগ্রামে হাসিনার বিচার দাবি
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙল ৯ ঘণ্টা পর
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রবল আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গণহত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশন কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের অনশন শেষ হয় রাত ৯টায়। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে মোবাইলে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। দীর্ঘক্ষণ কথা বলে তিনিও চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার। রাত ৯টার দিকে শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। তবে এসময় তাদের দাবি আদায়ে তিন দিনের সময় বেঁধে দেন রাসেল আহমেদ। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ধরে সড়কেই বসে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন, আমরা সেটি মেনে নিয়েছি।
এর আগে দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অনশনের ঘোষণা দিয়ে সড়কে বসে পড়েন তারা। অনশনকারীরা বলেন, হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে উঠব না। তখন সমাবেশস্থলে এক পাশে সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অপর পাশে যানজট লেগে যায়। বক্তারা বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ মাস হতে চললেও গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে না পারা অন্তর্বর্তী সরকারের বড় ব্যর্থতা। তারা পুলিশকেও এ জন্য দোষারোপ করেন। তারা বলেন, গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে না পারলে ব্যর্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। সমাবেশের শেষ পর্যায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে সেখানেই বসে পড়েন রাসেলসহ অন্যরা। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ‘খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
রাসেল বলেন, ‘স্বাধীনতা’র পর এখনও খুনি হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে আমাদেরকে রাজপথে নামতে হয়। মুক্ত বাতাসে এখনও লাশের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। বারবার তাদের বিচারের দাবিতে আমাদের আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। আজও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুন্ডাবাহিনী বীর চট্টলার বুকে মিছিল করেছে। বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ফ্যাসিবাদী কাঠামো গড়ে উঠেছিল সেটাকে ভেঙে দিয়ে খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে নেমে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা ন্যূনতম সংস্কার ও বিচার পাইনি।
তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখান থেকে উঠব না। আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছে ইউনূস সরকার। কিন্তু তারা কী করেন। খুনি বাইরের দেশে বসে আছে। তাদের ধরে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা। অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ ও ‘অপশাসন-নির্যাতনের’ প্রতিবাদে আগামী ১৬ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ঝটিকা মিছিল করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। মূলত এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করে।