গোদাগাড়ীতে পুকুর ইজারায় জালিয়াতির অভিযোগ
চালান গায়েব করে নতুন ইজারার তোড়জোড়
হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে খাস পুকুর ইজারায় ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন তিন বছরের জন্য দেওয়া ৩০টি পুকুর ফের ইজারার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এছাড়া হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করে আরও ২৯টি পুকুর ইজারার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে মৎস্যজীবীদের পক্ষে শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ২৭ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বাংলা ১৪৩১ সন থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য গোদাগাড়ীর ৯০টি খাস পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে। এক বছর না যেতেই এই ৯০ পুকুরের মধ্যে ৩০টির নতুন ইজারার নোটিশ জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২ জানুয়ারি ২ হাজার ২৩৬টি পুকুর ইজারা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক আবুল হায়াত। এই তালিকায় আগেই ইজারা দেওয়া ৩০টি পুকুর রয়েছে। এছাড়া হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা আরও ২৯টি পুকুর রয়েছে তালিকায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, ১৪৩১ থেকে ১৪৩৩ বঙ্গাব্দের জন্য গত মে মাসে মোট ৬১৫টি পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা যায়, ৫৯টি পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে জালিয়াতি করে। তাই এসব পুকুরের ইজারা বাতিলের পর নতুন করে তালিকায় আনা হয়েছে। তার দাবি, এসব পুকুর ইজারার মূল্য পরিশোধের যে ব্যাংক চালানের কপি জমা দেওয়া হয়, সেগুলো জাল। আবার তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসানের স্বাক্ষরও দলিলে স্ক্যান করে বসানো হয়েছিল। এসব কারণে পুকুরগুলো পুনরায় ইজারার নোটিশ জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে অভিযোগকারী শরিফুল ইসলাম বলছেন, ইজারার দলিল সম্পাদন করার জন্য গত বছরের ৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক চালানের মাধ্যমে ইজারামূল্য গ্রহণ করে ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করেন তৎকালীন জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর তৎকালীন উপজেলা জলমহাল কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব বদলি হয়েছেন। এখন স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট আমাদের ইজারা নেওয়া পুকুরগুলো কেড়ে নিতে চায়। তারা এসি-ল্যান্ড অফিসের কিছু কর্মচারীকে হাত করে আগের ইজারা ফাইল থেকে আসল চালানের কপি গায়েব করে দিয়েছে। এরপর সেখানে নকল চালানের কপি অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পুকুর ইজারাসংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উপজেলা প্রশাসন ৫৫টি পুকুরের বিপরীতে জমা দেওয়া চালান সোনালী ব্যাংকের গোদাগাড়ী শাখায় পাঠিয়ে যাচাই করেছে। সোনালী ব্যাংক থেকে দেওয়া চিঠিতে সঠিক জমাকারী ও জালিয়াতি করা প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শরিফুল ইসলামের প্রতিষ্ঠানগুলো জালিয়াতি করেছে। অথচ শরিফুলের জমা করা চালানের কপি সরকারি স্বয়ংক্রিয় চালান যাচাই ওয়েবসাইটে সার্চ দিয়ে দেখা গেছে, সবগুলোই সঠিক। গত বছরের ৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৩০টি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া হয়। অভিযোগকারী শরিফুল ইসলামের প্রশ্ন, ওই সময় তিনি চালানের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েও কেন এসি-ল্যান্ড অফিসে চালানের ভুয়া কপি জমা দিতে যাবেন। সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিতে চাইলে তো তিনি ব্যাংকে টাকাই জমা দিতেন না। তার আরও দাবি, পুকুর কেড়ে নিতে এসি-ল্যান্ড অফিসে আসল চালান সরিয়ে নকল চালান ঢোকানো হয়েছে। আবার যেসব সমিতির নামে ইজারা দেখানো হচ্ছে, সেগুলোর তিনি শিডিউলও কাটেননি।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, সম্প্রতি পুকুর ইজারাযোগ্য তালিকায় ২৯টি পুকুর এসেছে, যেগুলো ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি বলছে, এসব পুকুরও ইজারা নেওয়া হয়েছিল চালান জালিয়াতি করে। অথচ হাইকোর্টে রিট থাকায় এগুলোর চালানই জমা দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি এসব পুকুর ইজারা বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ১৪৩২-১৪৩৪ বঙ্গাব্দের জন্য এই ২৯ পুকুরের তালিকা প্রকাশের পর রাঙামাটি মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সেরাজুল ইসলাম উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। সেরাজুল ইসলামের পক্ষে আইনজীবী শামসুল হক ১৫ জানুয়ারি এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, সবকিছু আইনি প্রক্রিয়ায় করা হচ্ছে। তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া গেছে ২৯ পুকুরের চালান জাল করা হয়েছে। এ কারণে পুকুরগুলো পুনরায় ইজারার তালিকায় দেওয়া হয়েছে।