মসজিদের মিনারের টাকায় ‘জ্যাকব টাওয়ার’
নির্মাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন * আয়ের ২৫ শতাংশ মসজিদকে দেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি * এলাকাবাসীর ক্ষোভ
চরফ্যাশন প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভোলার চরফ্যাশনের আলোচিত ‘জ্যাকব টাওয়ার’ নিয়ে সমালোচনা থামছেই না। মসজিদের মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে বিশাল টাওয়ার নির্মাণ এবং তা তৎকালীন সংসদ-সদস্যের নামে নামকরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, টাওয়ার থেকে প্রাপ্ত আয়ের ২৫ শতাংশ মসজিদে বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া নির্মাণ ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুউচ্চ টাওয়ার হিসাবে জ্যাকব টাওয়ার উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এটি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ভোলার সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। এতে মন্ত্রী, এমপিসহ দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ২০১৩ সালে চরফ্যাশনের খাসমহল জামে মসজিদে একটি মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সৌদি আরবের মক্কার শায়খ আবদুল হাফিজ মক্কী ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সৌদি সরকারের তহবিল এবং জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তৎকালীন সংসদ-সদস্য (এমপি) এবং বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব মসজিদের মিনারের পরিবর্তে সেখানে টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। পৌরসভার তহবিল থেকে অতিরিক্ত ২০ কোটি টাকা খরচ করে ২২৫ ফুট উচ্চতার জ্যাকব টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। পরে মসজিদ কমিটির কাছ থেকে প্রভাব খাটিয়ে একটি রেজুলেশন করিয়ে টাওয়ার নির্মাণের বৈধতা দেওয়া হয়। রেজুলেশন অনুযায়ী, টাওয়ার থেকে প্রাপ্ত আয়ের ২৫ শতাংশ মসজিদের জন্য বরাদ্দের কথা থাকলেও সেটি দেওয়া হয়নি। মসজিদের মুসল্লিরা অভিযোগ করেন, টাওয়ার নির্মাণের আড়ালে সরকারি অর্থ লুটপাট এবং আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখন টাওয়ারটিকে মসজিদের মিনার হিসাবে ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া টাওয়ারটি মসজিদের প্রবেশপথে অবস্থিত হওয়ায় মুসল্লিদের সুবিধা বিবেচনার কথাও উল্লেখ করেন তারা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় টাওয়ারের উদ্বোধনী ফলক ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। পরে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে এর নাম পরিবর্তন করে ‘চরফ্যাশন টাওয়ার’ রাখা হয়। তবে টাওয়ারটির আয়-ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ।
চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসান জানান, আগের অনিয়ম দূর করে এখন নিয়ম অনুযায়ী টাওয়ারটি পরিচালনার চেষ্টা চলছে।
বরিশাল বিভাগের কমিশনার রায়হান কাওছার বলেন, ‘এটি মূলত দুই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি-মসজিদ ও পৌরসভার। মসজিদকে আয়ের একটি অংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়ের নির্দিষ্ট অংশ মসজিদের জন্য আলাদা হিসাবে জমা দেওয়া হবে।’ তুমুল সমালোচনার পরও জ্যাকব টাওয়ারে শীত মৌসুমে প্রতিদিন সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটক সমাগম হয়।