Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বাস-সিএনজি অটো শ্রমিকদের সংঘর্ষ

ভোলায় বাস টার্মিনাল রণক্ষেত্র, আহত ৫০

Icon

ভোলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভোলায় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালের দখলকে কেন্দ্র করে বুধবার দ্বিতীয় দিন সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বাস শ্রমিক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা। এ সময় বাস শ্রমিকরা সিএনজিচালিত ৬টি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছেন এবং এর মধ্যে ৩টিতে আগুন দিয়েছেন। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের পালটাপালটি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে বাস টার্মিনাল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রথম দফায় সংঘর্ষ হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে বুধবার সকাল থেকে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন কয়েক লাখ মানুষ। এদিকে সবশেষ প্রপ্ত খবরে বুধবার রাত পৌনে ১০টায় জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহানের সভাপতিত্বে বাস মালিক পক্ষ ও সিএনজিচালকদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক শেষে বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। বাস মালিক সমিতি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতাদের নেতৃত্বে এ সংঘাত চলছে। দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত আহত হন। দুপুরের পর উভয় গ্রুপকে সরিয়ে দিয়ে অবস্থান নেয় নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের টিম। জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান উভয় পক্ষকে নিয়ে বেলা ৩টায় বসার কথা থাকলেও পরে রাতে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়। এ তথ্য জানান ঘটনাস্থল পরির্দশনে আসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র বিশ্বাস ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার সরকার। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর প্রথমে বাস টার্মিনাল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা সরিয়ে দিতে অবস্থান নিতে থাকেন বাস শ্রমিকরা। প্রথমে সিএনজিচালিত ৪টি অটোরিকশায় তারা আগুন ধরিয়ে দেন। এরপরই রাতভর বাস মালিক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা গ্রুপের মধ্যে সংঘাত চলে। এ সময় ২টি বাস, বাস মালিক সমিতির অফিসের একটি কাউন্টার এবং সিএনজিচালিত ৮টি অটোরিকশা ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়। ভাঙচুর করা হয় আরও ৭টি বাসের গ্লাস। এ ঘটনায় বুধবার সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়ে টার্মিনালে অবস্থান করতে থাকেন বাস সমিতির নেতা ও শ্রমিকরা। বুধবার সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু করলে বাংলাবাজার এলাকায় বাধা দিয়ে একটি ভাঙচুর করা হয়। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা বাস শ্রমিকদের হামলার মুখে পড়েন। বেলা ১টায় মোস্তফা কামাল টার্মিনালের পূর্বপাশের সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা অবস্থান করছেন-এমন খবরে ফের লাঠি, রড, রামদাসহ তাদের ধাওয়া করেন বাস শ্রমিকরা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরাও পালটা লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের তাড়া করেন। এ সময় উভয় পক্ষ বৃষ্টির মতো ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে ৬টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে ৩টিতে আগুন দেওয়া হয়। বাসস্ট্যান্ডের সীমানা ঘেঁষে ফায়ার সার্ভিস অফিস থাকলেও সময়মতো তাদের দেখা যায়নি। তারা অবশ্য দাবি করেন, নিরাপত্তার জন্য তারা যাননি। পরে পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে আসে। বাস মালিক সমিতির সহসভাপতি মুনতাসির আলম রবিন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন হাজি জানান, ২৭ বছর ধরে তারা পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে বাস টার্মিনাল ব্যবহার করছেন। কিন্তু কিছুদিন ধরে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা এখানে টার্মিনাল ব্যবহার শুরু করেন। তাদের সরে যেতে বলেলেও তারা যাননি। মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার স্টাফরা এসে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা বাসে হামলা করেন। এ সময় ২০/৩০ জন শ্রমিক আহত হন। অপরদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি মো. মাকসুদুর রহমান জানান, তারা ২০-২৫ বছর ধরে এই টার্মিনাল ব্যবহার করছেন। নতুন করে টার্মিনাল থেকে তাদের উৎখাত করতে হামলা করে এবং আগুন লাগিয়ে দেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা। তাদের হামলা ও আঘাতে ৩০ জন সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক আহত হন। ওই সময় ভিডিও করতে গিয়ে স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক টিপু সুলতানের মাথা ফেটে যায়। পায়ে ইট পড়ে আহত হন ডিবিসি প্রতিনিধি অচিন্ত্য মজুমদার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, দুই পরিবহণের মালিক-শ্রমিকদের বাস টার্মিনাল ব্যবহার ও রাস্তায় চলাচল নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। আগের রাতে বিষয়টি সমঝোতার পর্যায়ে এলেও বুধবার সকাল থেকে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে মীমাংসার পর্যায়ে যাওয়ার।

এদিকে জেলার প্রধান সড়ক ভোলা-চরফ্যাশন রুট দিয়েই জেলার ৭টি উপজেলার সংযোগ হওয়ায় বাস ও সিএনজি চলাচল বন্ধ থাকায় কয়েক লাখ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেকে ইজিবাইক, মাইক্রোবাস নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে জরুরি কাজে যাতায়াত করেন। জেলার রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে উভয় গ্রুপের সমর্থনে থাকায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে অনড় বলে জানান সাধারণ মানুষ। জেলা সদরে ৩টি বাস টার্মিনাল রয়েছে। ইলিশা বাস টার্মিনাল, পুরোনো বাস টার্মিনাল ও বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল টার্মিনাল। পৃথক টার্মিনাল ব্যবহার করলে সংঘাত এড়ানো যায় বলেও মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম