রাজশাহী শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়
অফিস শুরুর দুই ঘণ্টা পরও হাজির মাত্র চার
রাজশাহী শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে অফিস শুরুর দুই ঘণ্টা পরও ২৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে উপস্থিত মাত্র চারজন। বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালক (ডিডি) এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত হচ্ছেন না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে অফিস শুরুর বিধান রয়েছে। অথচ বেলা ১১টার পরও ওই দুই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশই অফিসে উপস্থিত হন না। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ওই দুই দপ্তরের ২৭ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে মাত্র চারজনকে অফিসে উপস্থিত পাওয়া গেছে। সরেজমিন এ চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। এমনকি বিভাগীয় উপপরিচালক মো. সানাউল্লাহ এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেনও এ সময় অফিসে ছিলেন না। তবে শীর্ষ এ দুই কর্মকর্তা বলছেন, তারা দাপ্তরিক প্রয়োজনে বাইরে ছিলেন। তাদের অধস্তনরা যদি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নির্ধারিত সময়ে অফিসে অনুপস্থিত থাকেন, তবে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়ে জবাব চাওয়া হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নগরীর ভেড়িপাড়া মোড়ে চারতলা একটি ভবনে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালক এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়। ভবনের দোতলায় মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গিয়ে ডিডি মো. সানাউল্লাহকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি। কক্ষ খোলা থাকলেও অফিসে ছিলেন না শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান ও তৌহিদুল ইসলাম। সহকারী পরিচালক (এডি) নূর আখতার জান্নাতুল ফেরদৌসকেও পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে ছিলাম। অফিসে কেন অনুপস্থিত ছিলাম, সেটি পরে জানাব।’ এদিকে টেবিলে ছিলেন না সহকারী হিসাবরক্ষক জোবায়ের হোসেন, উচ্চমান সহকারী মোহাম্মদ বাবুল মিয়া ও অফিস সহকারী মহসিন আলী। তবে অফিসে ছিলেন ডিডির সহকারী আবু হোসেন ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর আলী আকবর। অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে আবু হোসেন বলেন, ডিডি গিয়েছেন একটি সভায়। এডি গিয়েছেন পরিদর্শনে। তবে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর আলী আকবর বলেন, ‘ডিডি ও এডি গিয়েছেন হাসপাতালে। শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান সরকারি সফরে আছেন।’ আর অন্যদের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এ দুই কর্মচারী।
নিচতলায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এ দপ্তরে মাত্র দুজন কর্মচারী উপস্থিত রয়েছেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় তারা তাদের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেনও তার কক্ষে ছিলেন না। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও সহকারী মনিটরিং অফিসার কাওসার হোসেনও দপ্তরে ছিলেন না। কর্মচারীরা দাবি করেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বাইরে বৈঠকে আছেন। কাওসার হোসেন আছেন ছুটিতে। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম কোথায়, তা কেউ জানাতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানাতে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ছিলাম। আমার সঙ্গে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামও ছিলেন। অফিসে অধস্তনদের অনুপস্থিতির বিষয়টির প্রমাণ পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারাই ঠিকমতো অফিসে থাকেন না। কাজ নিয়ে অফিসে গিয়ে তাদের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। নানা কাজে কর্মচারীরা টাকাও দাবি করেন। টাকা না দিলে হজ কিংবা ওমরাহ করতে যাওয়ার অনুমতিও মেলে না। দপ্তরে তিনিসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুপস্থিতির ব্যাপারে ডিডি মো. সানাউল্লাহর কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে বাইরে গিয়েছিলাম। আমার পেছনে পেছনে অন্যরা বের হয়েছে। সবার একসঙ্গে বের হওয়া ঠিক হয়নি। কেন তারা এভাবে বাইরে গেল, সেটা নিয়ে আমি তাদের শোকজ করে জবাব চাইব।’