Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

খুলনায় দলীয় কোন্দল, ব্যক্তিগত শত্রুতা

ছাত্র আন্দোলনে সমর্থনকারী বিএনপি কর্মীরা আসামি

নূর ইসলাম রকি

নূর ইসলাম রকি

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি সমর্থনকারী হয়েছেন মামলার আসামি। এমনকি দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীও মামলার আসামি হয়েছেন। ৫ আগস্টের পর খুলনার বিভিন্ন থানায় এমন মামলা হয়েছে। ছেলে হত্যার ঘটনায় কে মামলা করল জানেনই না নিহত রকিবুলের বাবা। এসব আসামির অনেকেই মামলার খবরে হতবাক হয়েছেন। প্রতিহিংসামূলকভাবে এমন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে আসামিদের। এখন প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।

খুলনা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানায় প্রায় ১৬টি মামলায় দুই হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। রাজনৈতিক এসব মামলার বেশিরভাগ বাদী হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। মামলাগুলোয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থনকারী, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কর্মী, শ্রমিক নেতাসহ ছেলে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতানামারা মামলা করেছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। মামলাগুলোতে মূলত হত্যা, লুট, ভাঙচুরসহ অনেক ধরনের অভিযোগই করা হয়েছে। কিভাবে তারা আসামি হয়েছেন এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর জানা নেই আসামিদের।

খুলনা মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির সঙ্গে মতামতের মিল না থাকায় নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করে আসছেন। সম্প্রতি মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটিতেও তাদের স্থান দেওয়া হয়নি। অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বঞ্চিত বিএনপির একাংশটি।

নগরীর ১৬ নম্বর এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিকদল ও যুবদলের বিভিন্ন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালীন শ্রমিকদের ভোটে নির্বাচিতও হয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর খালিশপুর থানায় ও সদর থানায় কিভাবে মামলার আসামি হয়েছেন জানেন না। নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা রানা বলেন, তিনি বর্তমান মহানগর বিএনপির কমিটির রাজনীতি করেন। তার নামে ৫ আগস্টের পর দিঘলিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। পেছনে আওয়ামী লীগের কারও হাত আছে বলে তিনি দাবি করেন।

মহানগর বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু যুগান্তরকে বলেন, খালিশপুর থানা বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় আমাকে আসামি করার পর আমি খুবই অবাক ও হতবাক হয়েছি। আমি যখন ওই থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম তখন সেটি সংস্কার করেছিলাম। আমার অর্থে তৈরি করা অফিস ভাঙচুরের মামলায় আমাকেই আসামি করা হয়েছে। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাঠে ছিলাম এটাও অনেকের কাছে হিংসার কারণ হতে পারে।

নগরীর খালিশপুর থানায় একটি মামলার বাদী বিএনপি নেতা শাহিদুল ইসলাম পাখি জানান, ৫ আগস্টের পর সম্ভবত প্রথম মামলা খালিশপুর থানায় হয়েছে। সব আসামিকে আমি চিনি না। ছাত্র আন্দোলনের কারও থাকার কথা না। চারদিক থেকে নাম আসছে। কে কোন ফাঁক দিয়ে দিয়ে দিয়েছে। মিঠু একসময় বিএনপি করত। এখন রাজনীতির সঙ্গে নেই।

পাইকগাছা উপজেলায় নিহত রকিবুল হাসানের বাবা রফিকুল ইসলাম গাজী যুগান্তরকে বলেন, পাইকগাছায় আনন্দ মিছিলে পতাকা উত্তোলন করার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে রকিবুল মারা গেছে। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে শুনেছি। আমি কিছুই জানি না, আসামিদের কাউকে চিনি না। আমি কার নামে মামলা করব। অনেকে আমার কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়েছে, তারাই হয়তো মামলা করে দিয়েছে।

খুলনা জজ কোর্টের আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, খুলনার বিভিন্ন থানায় ৫ আগস্টের পর অনেক মামলা হয়েছে। এ মামলাগুলোর কাগজ পর্যালোচনা করে দেখেছি অনেক আসামি ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানে না বা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সম্পৃক্ত না। ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে মামলায় আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে এগুলো বন্ধ না হলে অসংখ্য নিরীহ মানুষ হয়রানির স্বীকার হবে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহা. আহসান হাবিব যুগান্তরকে বলেন, মামলার বিষয় এমন ঘটনা সারা দেশের। বাদী ও আসামি অনেকেই অনেককে চেনে না। বাদী হিসাবে অনেকে স্বাক্ষর করেছে। এটা তদন্তের বিষয়। ফাইনাল তদন্ত না করে বলা যাবে না। এটার জন্য আরও সময় লাগবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম