Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি যাচাই-বাছাই

তথ্য না পাওয়ায় ডেটাবেজ তৈরিতে ধীরগতি

আড়াই মাসেও পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেয়নি পিএসসি * সঠিক তালিকা প্রণয়নে সময় দিচ্ছি : সচিব

রেজাউল করিম প্লাবন

রেজাউল করিম প্লাবন

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তথ্য না পাওয়ায় ডেটাবেজ তৈরিতে ধীরগতি

বারবার তাগিদ দিয়েও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাচ্ছে না মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। দীর্ঘ আড়াই মাসেও পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ (পিএসসি) বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে পারেনি। সরকারের ৬২টি মন্ত্রণালয় বিভাগের মধ্যে প্রথমদিকে ৪৭টি তথ্য দিলেও সেটি ছিল অসম্পূর্ণ। পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে পরের দেড় মাসে মাত্র ৭টি মন্ত্রণালয় বিভাগ তালিকা পাঠিয়েছে। এ কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি পিছিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ভুয়া, জাল সনদ ও অনিয়ম করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের চিহ্নিত করতে তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। দ্রুত তালিকা করে এসব চাকরিপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনি সেজে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন সময়ে। এসব ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। এরপরই ১৫ আগস্ট সচিবালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটাপ্রাপ্তদের তালিকা প্রণয়নের কথা সাংবাদিকদের জানান উপদেষ্টা। কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তথ্য চেয়ে ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখা থেকে চিঠি ইস্যু করে ৬২টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এরপর অতি জরুরি উল্লেখ করে ২২ আগস্ট সব দ্বিতীয় দফায় তাগিদপত্র দেওয়া হয়। এরপরও প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকা না পাঠানোয় ১৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখা থেকে জরুরি উল্লেখ করে ফের প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে পৃথক পৃথক চিঠি ইস্যু করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে কোটাপ্রাপ্তদের তথ্য ছঁক আকারে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির তালিকা পাওয়া গেলেও ১ম ও ২য় শ্রেণির তালিকা এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে জমা দেয়নি পিএসসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, তালিকা প্রণয়নে একটু ধীরগতি হচ্ছে। বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তালিকা পাঠায়নি। আমরাও সময় দিচ্ছি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করতে। ইতোমধ্যে অনেক মন্ত্রণালয় বিভাগের তালিকা পাওয়া গেছে। সংখ্যাটা ৫০-এর উপরে। আশা করি বাকি তালিকাও পাব। তিনি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এখনও পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেয়নি। আমরা তাগিদ দিচ্ছি। পিএসসির নতুন কমিটি দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন তালিকা দ্রুতই পাব আশা করি।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব মন্ত্রণালয় এখনো তালিকা দেননি সেখান থেকে চিঠির কোনো জবাব কিংবা ধীরগতির কারণও জানানো হয়নি। পিএসসি একটি অগোছাল তালিকা প্রথমদিকে জমা দিলেও সেখানে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। এ ধরনের তালিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কার্যত এগোতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চিঠি দিয়ে নতুন করে তালিকা চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিদাতা কর্তৃপক্ষ পিএসসি কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠায়নি।

তালিকা প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন উপসচিব মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এ যাবত ২২ হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুই হাজার ১ম ও ২য় শ্রেণির। বাকি ২০ হাজার ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে কমপক্ষে ৫০ হাজার কিংবা তার চেয়েও বেশি মুক্তিযুদ্ধ কোটাপ্রাপ্ত চকরিজীবী আছেন বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রাপ্ত ২২ হাজার কোটাপ্রাপ্তদের তথ্য দিয়ে ডেটাবেজ তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পিএসসির ১ম ও ২য় শ্রেণির তালিকাটা পেলে ডেটাবেজ পূর্ণরূপ পাবে। বাকি ৮টি প্রতিষ্ঠান যে কোনো সময় তালিকা জমা দেবে আশা করি। ডেটাবেজ সম্পূর্ণ হলে তা প্রকাশ করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ প্রমাণিত হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবে মন্ত্রণালয়।

তথ্য বলছে, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, ১০ শতাংশ পিছিয়ে থাকা জেলার মানুষের জন্য, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য এবং ১ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ছিল।

২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর কোটাবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভা সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (যেসব পদ আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি বলে পরিচিত ছিল) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। চলতি বছর সংস্কারের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুন। সেই আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। এরপর দেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের সংস্কারের অংশ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মন্ত্রণালয়সহ সব বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম