পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন
বাংলাদেশে ধর্ম চর্চা ও প্রসারে স্বাধীনতা রয়েছে
ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে ৩০ চ্যালেঞ্জ শনাক্ত * ধর্মে ৬, সংস্কৃতিতে ৯, তথ্য-উপাত্তে ৪, ক্রীড়ায় ৬ এবং যুব খাতে রয়েছে ৫ চ্যালেঞ্জ
দেশের ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে ৩০ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্য ধর্ম উপখাতে ৬টি, সংস্কৃতিতে ৯টি, তথ্য-উপাত্তে ৪টি, ক্রীড়ায় ৬টি এবং যুব খাতে রয়েছে ৫টি করে চ্যালেঞ্জ। পরিকল্পনা কমিশনের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে উঠে এসছে এমন তথ্য। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রথমবারের অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছে সংস্থাটি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। এর উপখাত রয়েছে চারটি। এ খাতের কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছে সরকারের চারটি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভাগ বা সংস্থা। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বিকাশের মাধ্যমে উদার ও অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সর্বজনীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় এ খাতের সমস্যাগুলো সমাধান করতে এ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রউফ রোববার যুগান্তরকে বলেন, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, অ্যাকশন প্ল্যানে প্রকল্প ও কর্মসূচি চিহ্নিতকরণ, বাস্তবায়নকাল, সম্ভাব্য ব্যয়, অগ্রাধিকার, প্রকল্প বা কর্মসূচির পর্যায়করণ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সন্নিবেশন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, যেমন-অবকাঠামো উন্নয়ন, জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্ঞান ব্যবস্থাপনা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে না উঠা, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাব, প্রকল্প বাস্তবায়নে এডিপিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব, অর্থছাড়ে বিলম্ব, অপ্রতুল প্রশিক্ষণ সুবিধা, প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষ জনল নিয়োগে দেরি করা এবং নির্মাণ প্রকল্পে পণ্য, সেবা বা জমি অধিগ্রহণের বিলম্ব ঘটা। এছাড়া দেশের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় তৃণমূলের মানুষের সম্পৃক্ততা না থাকা, অনেক অস্পৃর্শযোগ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেমন-বিভিন্ন উপজাতীয় ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলা, পারফর্মিং আর্ট, সংগীত প্রভৃতির বিলুপ্তি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমের স্বল্পতা রয়েছে। আরও আছে, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ প্রচার ও সংরক্ষণে উদ্যোগে ঘাটতি, প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলো সংরক্ষণে তহবিলের ঘাটতি ও দক্ষতা জনবলের অভাব, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের রক্ষণশীলতায় অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান অনাবিষ্কৃত আছে। রয়েছে পর্যাপ্ত ও নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনার অভাব এবং জাতীয় শিক্ষা নীতির সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির বিষয়ভিত্তিক বিপুলসংখ্যক পাঠ্যক্রম তৈরি না করা। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে-তথ্য-উপাত্ত উপখাতে উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নে দক্ষ মানবসম্পদের অভাব, প্রচার কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশনের স্বল্পতা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার না থাকা এবং তথ্যের প্রবেশাধিকার ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে নেওয়া উদ্যোগের কার্যকর বাস্তবায়ন না থাকা।
এ ছাড়া ক্রীড়া উপখাতের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-ক্রীড়া বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার কম বিস্তৃতি, বিকেএসপির মতো আরও প্রাতিষ্ঠানের অভাব, ক্রীড়া উপখাতে বাজেটে কম বরাদ্দ, ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজন বা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দের সীমিত সুযোগ এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থ মঞ্জুরে জটিল প্রক্রিয়া। অপরদিকে, যুব খাতের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-চলমান জনমিতির সুবিধা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সীমিত উদ্যোগ, কৃষি থেকে শিল্প, সেবা, আন্তর্জাতিক অভিবাসনে যুবকদের ঝোঁক, অনানুষ্ঠানিক কাজে যুব শক্তির ব্যবহার এবং কর্মসংস্থানের অভাব, বেকার সংখ্যা বৃদ্ধি।
অ্যাকশন প্ল্যানের খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশে যুবকদের সংখ্যা ১৯৭৪ সালে ছিল প্রায় ১ কোটি। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৪০ লাখে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ যুবকদের সংখ্যা আরও বেড়ে ৪ কোটি ৮০ লাখ হতে পারে। এরপরই কমতে শুরু করবে যুব শক্তি। তাই চলমান জনমিতি লভ্যাংশের সম্ভাবনা বেশ কয়েক বছর ধরে থাকবে।
তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তবে এখনও সম্ভাবনার তুলনায় যুব শক্তির প্রকৃত ব্যবহার খুব বেশি নয়। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ধর্ম উপখাতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রসার ও ধর্মচর্চার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। তা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনের সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যই ধর্মীয় খাতে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প ধর্মীয় শিক্ষার উন্নয়ন, নৈতিক ও দায়িত্বশীল আচরণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উপলব্ধি তৈরিতে অবদান রাখবে। এরপরও ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা এবং সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার তাৎপর্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যাকশণ প্ল্যানে।
ক্রীড়া উপখাতের বিষয়ে অ্যাকশন প্ল্যানের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষা কার্যক্রম জোরদারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এরপর ধীরে ধীরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ক্রীড়া কার্যক্রম উন্নয়ন ও বিস্তারের চেষ্টা চলমান। খেলাধুলার জন্য প্রয়েজনীয় সুযোগ-সুবিধা বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে উন্মুক্ত স্টেডিয়াম, ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ ও উন্নয়ন এবং সাঁতার প্রতিযোগিতা উৎসাহিত করতে দেশজুড়ে সুইমিং পুল তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে ফুটবল খেলার উন্নয়নে কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক মান পূরণে বিভিন্ন অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা হালনাগাদ করাসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে ক্রিকেটের মান উন্নীত করা হয়েছে। গ্রামীণ খেলাধুলার মান উন্নয়নেও কাজ চলছে। কিন্তু এরপরও আছে নানা চ্যালেঞ্জ।